বাগেরহাট প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, সেচ্ছাসেবক ও শুকনো খাবার।
ঝড়ের প্রভাব ২৩ অক্টোবর বুধবার রাত থেকে জেলায় থেমে থেমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা হাওয়ায় ২৪ অক্টোবর ভোররাত থেকে গতি কিছুটা বেড়েছে। মাঝে মাঝে তা দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তা জেলার জনজীবনে এখনো সেভাবে বিঘ্ন ঘটায়নি। সকাল থেকে রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভার্চুয়াল একটি জরুরি সভা করেছেন। প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে উপজেলা প্রশাসনও।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
এছাড়া উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আড়াই হাজারের বেশি রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে শুকনা খাবার। নগদ টাকা ও চাল মজুদ রাখা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সভা করেছে। মোংলা বন্দরে এক নম্বর অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বন্দরের সব নৌযানগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তবে মোংলা বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশি বিদেশি নিয়ে ৮টি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছে। সেগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে। আমরা ঝড়ের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা কূলে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্যজীবী সমিতির নেতা শেখ ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, জেলেরা আগের থেকে এখন অনেক সচেতন। তবে এই জেলেরা যখন গভীর সমুদ্রে থাকে তখন হঠাৎ কোনো দুর্যোগ আসলে তারা কোনো খবর পায় না। তাই সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের আধুনিক ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান এই মৎস্যজীবী নেতা।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, জেলায় ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে। এই ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া অন্য পোল্ডারগুলোর বেশ কিছু পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও জিওব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচার শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাড়ে তিন হাজার সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সবার সহযোগিতা নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available