নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে দায়েরকৃত এজাহার প্রত্যাহার করতে হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি নেতার চাপের মুখে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছিলেন। মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন শফিকুল। বিষয়টি নড়াইল জেলা বিএনপির নেতাদের জানিয়েও কোনো ফল হয়নি।
জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে শ্রমিক নেতা শফিকুল ইসলাম গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নড়াইল শেখ রাসেল সেতুর ওপর সংঘর্ষকালে হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়। এখনো তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। কাটেনি আতংকও। আংশিক সুস্থ হয়ে শফিকুল ইসলাম গত ৫ অক্টোবর ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় একটি এজাহার জমা দেন।
এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মাশরাফির বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল সিকদার নীলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
২৩ অক্টোবর দুপুরে মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ভদ্রবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী রাকিবুদ্দীন সেন্টুর চাপের কারণে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে জোরপূর্বক কয়েকজন ধরে নিয়ে নড়াইল থানায় নিয়ে গিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করিয়েছেন। বিষয়টি তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
কী কারণে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী সেন্টুর সাথে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার ভালো সম্পর্ক। তার সম্পর্কের কয়েকজনকে আসামি করায় মামলাটি জোরপূর্বক তাকে দিয়ে প্রত্যাহার করানো হয়েছে। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচরে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে ভদ্রবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী রাকিব উদ্দিন সেন্টু বলেন, ‘শফিকুল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছে সত্য। কিন্তু তিনি আমাকে না জানিয়ে তার ইচ্ছামতো আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে মামলা করেছে। শফিকুল ইউনিয়ন বিএনপির কোনো পদে নেই। তবে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সেই হিসেবে হয়তো তিনি শ্রমিক দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। তবে তাকে চাপ প্রয়োগ করে মামলা তোলা হয়েছে এ অভিযোগ সঠিক নয়।’
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট নড়াইল শেখ রাসেল সেতুর ওপর ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় আগেই একটি মামলা হয়েছে। একটি স্পটে হামলার ঘটনায় সাধারণত একটি মামলা হয়। রাসেল সেতুর ওপর হামলার ঘটনায় আগেই একটি মামলা হয়েছে। সে কারণে হয়তো শফিকুল মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে পারে। মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে এজহার দায়েরকারী শফিকুল কোনো কিছু জানাননি। তাই কেন? কী কারনে তিনি মামলা প্রত্যাহার করেছেন?এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।‘
নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের শফিকুল ইসলাম একটি এজাহার জমা দিয়েছিলেন। যেহেতু একই ঘটনায় আগে একটি মামলা রুজু হয়েছে। সেই কারণে ওই অভিযোগপত্রের নতুন আসামিদের পুরনো মামলার সাথে সংযুক্ত করার সুযোগ ছিলো। কিন্তু কয়েকদিন পরেই আবেদনকারী এজাহারটি প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available