চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ ত্রাণের চাল হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল বিভিন্ন বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাদ্রাসা/এতিম খানায়) অধ্যায়নরত দুস্থ ও অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের আহার্য বাবদ ব্যতীত অন্য কোনো খাতে ব্যায়/বিতরণ করা যাবে না, এমন নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কেউ।
গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাবিবুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে এই বছরের স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে চাল দেওয়া হয়। সম্প্রতি বিষয়গুলোর অনুসন্ধানে গেলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।
গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নে দারুল উলুম হামিউস সুন্নাহ নূরানী ও ক্বওমী মাদ্রাসার সভাপতি মজিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা চাউলের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু যারা বরাদ্দে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছে তারা আমাদের চাউল না দিয়ে ৩৩ হাজার টাকা দিয়েছে। চাল পেলে আমাদের অনেক উপকার হতো। আমার মাদ্রাসায় অনেক অসহায় দুস্থ ছাত্র-ছাত্রী আছে। তাদের আহারের জন্য আমাদের অনেক চাউল ক্রয় করতে হয়।
একই ইউনিয়নের হালিমা তালিমুল কুরআন নুরানী ও ক্বওমী মাদ্রাসা এতিমখানার সভাপতি আব্দুল্লাহ আনসারী বলেন, আমাদের দেয়া বরাদ্দ ২ টন চাউলের পরিবর্তে ২৭ হাজার টাকা দিয়েছে। বরাদ্দের ২ টন চাউলের কথা জিজ্ঞেস করলে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। এভাবে তারা ২১টির মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানে চালান আত্মসাৎ করে।
অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে মুক্তারুল ও সেরাজুলসহ বিভিন্ন চিহ্নিত দালাল চক্র এ অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দকৃত চাল প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে চাল আত্মসাৎ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায্য পাওনা চাইতে গেলে দেওয়া হয় হুমকি।
এদিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম প্রি-ক্যাডেট নূরানী মাদ্রাসায় খোঁজ নিতে গেলে প্রকল্প কমিটির সভাপতি তুহিন রেজা বলেন, তারা আমাকে ২ টন চাউলের পরিবর্তে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। ত্রাণের আবেদন দেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মুক্তারুলকে আবেদন দেয়ার কথা বলেন।
গোমস্তাপুর উপজেলার একই ইউনিয়নের গৌরিপুর নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ২ টন চাউলের বরাদ্দের বিপরীতে তারা ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। এ টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ত্রাণের জন্য আবেদন (ইউএনও) অফিস ও জেলায় জমা হয়। তারপর আমার কাছে আসে যাচাই-বাছাই করার জন্য। যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সে বরাদ্দ উঠিয়ে নিয়ে কী করলো সেটা আমাদের আর জানার বিষয় না।
এ বিষয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ডিও লেটার নিয়ে আসে। ফরওয়ার্ডিংয়ে সই নিয়ে মাল দিয়ে দেওয়া হয়। ফরওয়ার্ডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাল তো প্রতিষ্ঠানে খাবে না, তখন অন্য ডিলারের কাছে বিক্রি করতে হয়। যে ডিলারের নামে ফরওয়ার্ডিং দেবে সে ডিলারকে দিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুক্তারুল ইসলাম বলেন, আমি কাগজ দিয়েছিলাম, টাকা পয়সা সব সেরাজুল লেনদেন করেছে।
চাল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ফোনে জানিয়েছেন, টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমি ফোনে কথা বলতে চাই না। এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, জেলা থেকে যখন বরাদ্দগুলো দিয়ে দেয়, সে প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিয়ে দেওয়া পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব শেষ। সে প্রতিষ্ঠানগুলো চাল বেচে কী করল না করল আমাদের মন্তব্যের বাইরে। যদি এ ধরনের দালালের খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এদিকে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মীর আল মুনসুর সোয়াইব মুঠো ফোনে বলেন, বিষয়টি আমি শুনলাম। গোমস্তাপুরে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি, পরে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ বলেন, চাউলের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই, যদি এরকম হয়ে থাকে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available