জামালপুর সংবাদদাতা: দুর্ভোগ কমাতে দেশের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন জামালপুরের মাহমুদুল হাসান। ছোট থেকেই মাইক্রো কন্ট্রোলিং এবং পোগ্রামিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা রয়েছে তার। তিনি মেলান্দহ উপজেলার আনসারুল আলমের ছেলে ।
২০২০ সাল থেকে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ে গবেলনা শুরু করেন তিনি। এ বিষয়ে মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা এখনো কার্যকর করা যায়নি । কারণ হিসেবে আমি মনে করি সকল পর্যায়ে সমস্যাগুলোকে একত্রে চিন্তা করে সমাধান করা হয়নি ।
যানজট, পথচারীদের জীবনঝুঁকি এবং যানবাহন পার্কিং সমস্যার মতন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো একত্রে সমাধান করা না হলে, এই পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না। বর্তমান ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় সমস্যাগুলি মূলত যানবাহনের জ্যাম নিরসনে কেন্দ্রিত, ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অতীত এবং বর্তমানে অনেকগুলো ট্র্যাফিক ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে মূলত দুই ধরনের যানজট সৃষ্টি হয় । যানবাহনের জ্যাম এবং সাধারণ মানুষের জ্যাম। শুধু যানজট নিরসনে মনোযোগ দিলে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। রাস্তায় চলতে গিয়ে পথচারীদের অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে রাস্তা পার হতে হয়। একদিকে যানবাহন থামতে চায় না, অন্যদিকে পথচারীরাও অপেক্ষা করতে চান না। এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজন যেখানে উভয়ের স্বার্থ রক্ষা পায়। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে কয়েকটি ওভারব্রিজ বা জেব্রা ক্রসিং যথেষ্ট নয়। কিছু জায়গায় প্রতি ১০০ মিটার পর জেব্রা ক্রসিং স্থাপন করা এবং সেখানে সময়ভিত্তিক ট্র্যাফিক লাইট বসানো প্রয়োজন । ৩০ সেকেন্ড পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য এবং পরবর্তী ২ মিনিট যানবাহনের জন্য দেওয়া যেতে পারে। এমন ব্যবস্থা থাকলে পথচারীরাও জানবে যে কিছু সময় পরই রাস্তা পার হতে পারবে, ফলে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা কমবে।
গণপরিবহনের প্রতিযোগিতা কমাতে কি ধরনের ব্যবস্থা দরকার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজটের একটি বড় কারণ হলো গণপরিবহনগুলোর যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা। এই সমস্যার সমাধানে প্রতিটি গণপরিবহনে ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা বসানো এবং ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে এই ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গণপরিবহনগুলো সিরিয়াল মেনে চলবে, যাতে প্রতিযোগিতা বন্ধ হয় এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় ।
এছাড়া বাসের দরজায় সেন্সর লক স্থাপন করে তা ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমে সংযুক্ত করা উচিত। যাতে নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড ছাড়া দরজা খোলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এদিকে চালকদের জন্য পার্কিংও একটি বড় সমস্যা বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মার্কেট বা অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে পার্কিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান না থাকায় অনেককে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়। এর ফলে যানজট আরও বেড়ে যায়। প্রশস্ত রাস্তাগুলো পার্কিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর ফলে এলোমেলো পার্কিংয়ের কারণে যে জ্যাম সৃষ্টি হয় তা অনেকাংশে কমবে।
টাইমিং সিস্টেম ট্র্যাফিক সিগন্যাল নিয়ে মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার অনেক রাস্তায় হঠাৎ করেই দুই লেন থেকে এক লেনে বা তিন লেন থেকে দুই লেনে রূপান্তরিত হয়ে যায় । এই ধরনের পরিস্থিতিতে ট্র্যাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা এবং লেন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা উচিত । এই ব্যবস্থা থাকলে যানবাহনগুলো আড়াআড়ি চলাচল করে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না এবং যানজটও কমবে।
ফুটপাত ব্যবস্থার উন্নতি এবং ব্যবসায়ীদের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার ফুটপাতে বসা ছোট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বিক্রয় করেন। তাদের জন্য সুবিন্যস্ত এবং সুন্দরভাবে দোকানগুলো গুছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ফুটপাতের যানজট কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া দেশীয় ইঞ্জিনিয়ার কাজে লাগিয়ে অনেক পণ্য আমদানির পরিবর্তে নিজস্ব উৎপাদনও করা সম্ভব।
তবে ইন্টেলিজেন্ট ট্র্যাফিক সিস্টেমের প্রবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের পরিমাণ অনুযায়ী সিগন্যালের সময় পরিবর্তন করার ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। ইচ্ছে করলে একজন ট্র্যাফিক পুলিশও রিমোটের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কোন জটিল সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে না। ট্র্যাফিক পুলিশদেরও জীবন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করতে হবে না । সিগন্যালে ক্যামেরা বসিয়ে সিগন্যাল অমান্যকারীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যেতে পারে । আমরা যদি এসব পদ্ধতি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে ঢাকা শহর থেকে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available