মাজেদুল ইসলাম, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: কসবায় গত ১২ বছর ধরে টি. আলী ডিগ্রী কলেজ ও কুটি মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আটকে আছে। কলেজ ২টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এলাকায় হওয়ায় প্রায় ৮ মাস আগে তিনি অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু কলেজ দু’টির অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। মন্ত্রীর আদেশ অমান্য করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই চলছে কলেজের সকল কার্যক্রম।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে উপজেলার কলেজ ২টিতে দু’জন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ওই দুটি কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবকরা। কলেজ দু’টিতে নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় কর্মচারিদের মধ্যে একধরনের দায়িত্ব পালনে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কলেজ দু’টিতে শিক্ষক-কর্মচারিরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আনুগত্যে না থেকে খেয়াল খুশি মতো দায়িত্ব পালন করছে। ফলে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার মান।
জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কলেজ ২টির কার্যক্রম। এলাকার সাংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কলেজ ২টির তৎকালীন সভাপতি ইউএনওকে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশনা দিলেও রহস্যজনক কারণে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে নূনতম ১২ বছরের অভিজ্ঞতার নিয়ম থাকলেও এ কলেজের ক্ষেত্রে সেটি অনুসরন করা হয়নি। ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অমান্য করে নির্ধারিত অভিজ্ঞতা ছাড়াই টি.আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পান আবুল কালাম আজাদ। নিয়োগ বিধান অমান্যের কারণে ২০১০ সালে উপাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। ২০১২ সালে বিভিন্নভাবে তদবীর করে উপাধ্যক্ষ পদে তিনি আবার পূনর্বহাল হন। পরে ২০১৮ সালে টি.আলী কলেজের অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন অবসরে গেলে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান মোঃ হুমায়ুন কবির।
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ না পেয়ে উপাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর আনুগত শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরকে তার কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পুলিশ এবং কলেজের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কয়েক ঘন্টা পর তালা ভেঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে আবুল কালাম আজাদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লংঘন করে এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি নিজের দখলে রেখেছেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের অনুসারী অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত কলেজে আসেন না। তারা কলেজ ফাঁকি দিয়ে অন্য কাজে সময় কাটানোয় কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
অন্যদিকে কুটি মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজটিও ১ যুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। ২০১১ থেকে শুরু করে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে অধ্যক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করা হলেও রহস্যজনক কারণে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্থগিত হয়ে যায়। তাই প্রথম প্রতিষ্ঠিত জেলার এই মহিলা কলেজটিতে শিক্ষার মান নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহল উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
টি. আলী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অপরদিকে কুটি মিয়া আবুদল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতান কবির জানান, বিগত সময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পরবর্তী মিটিংয়ে এজেন্ডা দিয়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
কলেজ দুটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিমুল এহসান খান জানান, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। আইনমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available