লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের ঋণ নিয়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। নিত্যদিনে চলছে তর্কবির্তক, ঝগড়া বিবাদ। দাদন ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত টাকা দাবি করে মামলা দায়ের করছে। টাকা দিতে না পেয়ে অনেক গ্রহীতা বাড়ি ছাড়া। তাই দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা।
দাদন ব্যবসায়ীর দাবি করা টাকা পরিশোধ করেও স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংক চেক ফিরে না পাওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ ও গণপিটিশন দিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের ব্যবসা। গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর। তারপর দেওয়া হয় চড়া সুদে টাকা। গ্রহীতা চড়া সুদের টাকা দিতে দেরী হলে দাদন ব্যবসায়ীরা ব্যাংক চেকে ইচ্ছামত টাকার পরিমাণ বসিয়ে চেক জালিয়াতির মামলা দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীর দাবি করা টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছেন না স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংক চেক। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই মামলার কারণে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অভিযোগকারী উপজেলা দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের অনিল চন্দ্র বলেন, ছেলে অসুস্থ থাকার কারণে ২০ শতাংশ সুদে দুই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তাই দাদন ব্যবসায়ীরা তাঁকে প্রায়ই অপদস্থ করতেন। পরে বাধ্য হয়ে বসতভিটার আট শতক জমি দাদন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ, এখন পর্যন্ত তার চেক ও স্ট্যাম্প ফিরত দেয়নি।
অপর অভিযোগকারী পূর্ব সিন্দুর্না এলাকার মোহন চন্দ্র রায় বলেন, দাদন ব্যবসায়ীর দাবি করার পরও দিচ্ছে না স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন দপ্তরে ২০ থেকে ২১ জন দাদন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার অডিটোরিয়াম এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, আমি অসুস্থতার কারণে দুজন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। এর মধ্যে একজন সাবেক চেয়ারম্যানও রয়েছে। এ পর্যন্ত তাদেরকে ১৫ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা সুদ দিয়েছি। তাদের আসল টাকাও পরিশোধ করেছি। কিন্তু আরো সুদের টাকা দাবি করছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রতিদিন তাড়া হুমকি দিচ্ছে আদালতে চেকের মামলা করবে বলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দাদন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি দাদন (সুদের ব্যবসা) করি না। আর সুদখোরেরা তো জোর করে কাউকে টাকা দেয় না। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্যই মানুষ অনুরোধ-বিনুরোধ করে কাছে টাকা নেয়। এ জন্য সুদখোরেরা যা নেয়, তা উপকারের ফল। এতে দোষ কী?’
হাতীবান্ধা থানার (ভারপ্রপ্ত) ওসি মাহামুদুন নবী বলেন, দাদন ব্যবসা বেআইনি। অভিযোগ পেয়েছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available