কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে ৩১ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫। এসময় পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানায়, কক্সবাজারে মরণ নেশা ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাগরপথে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়নই প্রকাশিত হচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে উখিয়া-টেকনাফের বেশির ভাগ পাচারকারী জড়িত বলে জানা যায়। স্থানীয়দের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশু, নারী ও পুরুষ পাচারের জন্য সংগ্রহ করে তাদের দুর্গম পাহাড়ী আস্তানায় আটক রাখে। আটকদের সুযোগ বুঝে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, পাচারকারীরা তাদের পরিবার থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে।
র্যাব আরও জানায়, গত ১২ নভেম্বর কক্সবাজার জেলার উখিয়ার মোছার খোলা এলাকার একলাছ মিয়া ও তার চাচাতো ভাই এবং ২/৩ জন বন্ধু কচ্ছপিয়া মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ঘুরতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়। ঘটনার দিন বিকেলে ঘুরাঘুরি একপর্যায়ে তারা ছবি তোলার সময় অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি তাদের নিকট আসে। এ সময় তাদের নাম-ঠিকানা জানতে চেয়ে হঠাৎ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা জোরপূর্বক ভিকটিমদের চোখ বেঁধে ফেলে এবং সেখান থেকে পাহাড়ের চূড়ায় একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম একলাছ মিয়া সেখানে একটা ছোট খুপড়ি ঘরে ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ, শিশু দেখতে পায়। মানব পাচারকারীরা তাকে নির্যাতন করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেবে বলেও হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ভিকটিম একলাছ মিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেও মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় গত ১৬ নভেম্বর তাকেসহ ১৫-২০ জনকে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে পাহাড়ের চূড়ার খুপড়ি ঘর থেকে বের করে সাগর পাড়ে ট্রলারের নিকট নিয়ে যাওয়ার সময়ে কৌশলে সে পালিয়ে আসে। পরে তার সাথে থাকা চাচাতো ভাইসহ অন্যান্যরা পাচারকারীদের হেফাজতে থাকায় তাদের উদ্ধারের জন্য র্যাবের সহায়তা কামনা করেন।
ভিকটিমদের উদ্ধারসহ মানবপাচারকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। ভিকটিম একলাছ মিয়ার নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ১৮ নভেম্বর মধ্য রাতে র্যাব-১৫ এর ক্যাম্পের আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকাস্থ জনৈক নুর হোসেনের বাড়ীর পিছনে পাহাড়ের চূড়ায় একটি গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মানব পাচারকারীদের হেফাজত থেকে ৫ বাংলাদেশি (পুরুষ ৩, নারী ১, শিশু ১) ও ২৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক (পুরুষ ২, নারী ২ ও শিশু ২২)সহ মোট ৩১ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এ সময় পাচার চক্রের ২ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাবের আভিযানিক দল।
গ্রেফতার মানব পাচারকারীরা হলেন, হ্নীলা ইউনিয়নের মো. আনোয়ার (৪৪) এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৬)।
উদ্ধার হওয়া ৩১ জন ভিকটিম এবং গ্রেফতার পাচারকারীদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে টেকনাফ মডেল থানায় তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available