ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার আরশিনগর ইউনিয়নে চরফিলিজ গ্রামের মোসা. সামসুননাহার বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুই হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ঐ হাতুড়ে চিকিৎসকের নাম মো. আক্তার মিজি ও মানিক মিজি। এ ঘটনায় তাদের দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর চরফিলিজ এলাকার বাসিন্দা মোসা. সামসুননাহার বেগম বটি দা দিয়ে কাজ করার সময় ডান হাত কেটে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে চরফিলিজ বাজারে আক্তার ডাক্তারের দোকানে নিয়ে গেলে ওই রোগীর হাতে ইনজুরি দেখে তার ছেলে ডাক্তার মানিক বলেন আপনারা টেনশন কইরেন না, আমরাই সব করে দিতে পারব। কোনো হাসপাতালে নেওয়া লাগবে না।
পরে ডান হাতের ক্ষত স্থানে প্রায় ৩০টি সেলাই করেছেন। পরে এক সপ্তাহ বাড়িতে রেখে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে ২০ হাজার টাকা বিল করেছেন তারা। তবে এক সপ্তাহ পরে সামসুননাহার বেগমের হাতে ইনফেকশন হয়ে পুঁজ হয়ে যায়। তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাইলে আক্তার ও তার ছেলে মানিক তাদেরকে ঢাকা নিতে বারণ করে। কারণ ঢাকায় টাকা বেশি লাগবে তাই তাদের পরিচিত চাঁদপুরে চাঁদপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে ১৬ দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে ডাক্তার ব্যর্থ হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। ঢাকায় মিরপুরে একটি হাসপাতালে ২ লাখ টাকা খরচে তার চূড়ান্ত অপারেশন করেও ভালো হয়নি। এখন হাত কেটে ফেলতে হবে এমনটাই জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরশিনগর ইউনিয়নের চরফিলিজ বাজারে আক্তার মিজির একটি ফার্মেসির দোকান রয়েছে। সেখানে সে বিভিন্ন রকম চিকিৎসা সেবা দেন। সে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মানুষের সাথে প্রতারণা করে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তার ছেলে মানিক মিজি DMS কোর্স করে। এই নামে বিএমডিসি স্বীকৃত কোনো চিকিৎসা বিষয়ক ডিগ্রি নাই। বাংলাদেশে কেবল DMF ডিগ্রির বিএমডিসি স্বীকৃতি রয়েছে।
এ বিষয় মামলার বাদী রোকেয়া বেগম বলেন, আমার মায়ের হাত কেটে কয়েকটি রগও কেটে গেছে। আমরা বিপদে পড়ে নিয়েছি আক্তার ও মানিকের ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা বা রক্ত থামাতে। আমরা আমার মাকে ঢাকা নিয়ে যেতাম। কিন্তু আক্তার ও মানিক নিতে দেয়নি। তারা বলেছে তারাই ঢাকা তারাই সব। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার মার হাতে সেলাই দিয়ে চিকিৎসা করার পরে হাতের পচন ধরে যায়।
পরে তাদের পরামর্শে চাঁদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলেও আমার মার হাত ভালো হয়নি। সর্বশেষ ঢাকায় চিকিৎসা করেও আমার মায়ের হাত ভালো হয়নি। আমার মায়ের হাত কেটে ফেলতে হবে। আক্তার ও মানিকের বিরুদ্ধে আমি কোর্টে মামলা করেছি। এই ভুল চিকিৎসা করে আমার মায়ের হাতের ক্ষতিপূরণ ও তাদের আইন অনুযায়ী বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত মানিক মিজি বলেন, তারা মাকে নিয়ে আহত হওয়ার পরে আমার কাছে আসলে আমি হাতে সেলাই দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছি। আমি তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসাও দিয়েছি।
অভিযুক্ত আক্তার মিজি বলেন, ওই মহিলার হাত কেটে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদের ফার্মেসিতে আসলে আমরা প্রাথমিকভাবে সেলাই করেছি। পরে বাড়িতে রেখে ঔষধ অ্যান্টিবায়োটিকসহ ডোস দিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, যেখানে মহিলার হাতের রগ কেটে গিয়েছে। হাতের রগ কাটলে এমবিবিএস সার্জন দারা অপারেশন করাতে হতো। কিন্তু এই কাজ এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া যদি কেউ করে থাকে তাহলে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এমবিবিএস ডাক্তার না হয়ে ফার্মেসির ঔষধ বিক্রেতা হয়ে এরকম কাজ শরীয়তপুরে কেউ করে থাকলে আমরা তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন দিব। আর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তার। এসব হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available