শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের জাজিরায় অসহায় এক পরিবারের কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় লোকজন নিয়ে হামলা করে ঘর-বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
জাজিরা পৌরসভার আক্কেল মাহমুদ মুন্সী কান্দি এলাকার মুন্সি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জাজিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযুক্ত বিএম শামসুল হক (শামচু বেপারী) জাজিরা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪০ বছর যাবত জাজিরা পৌরসভায় আক্কেল মাহমুদ মুন্সী কান্দি এলাকায় নিজ জমিতে বহুতল পাকা ভবন ও টিনের ঘড় করে বসবাস করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মুন্সি ও মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের পরিবার। হঠাৎ করে সেই বাড়ি ও জমিতে চোখ পরে জাজিরা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএম শামসুল হকের। তিনি সেই বাড়ি দখলের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন।
পরবর্তীতে তখনকার সংসদ সদস্যের পরামর্শে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট কাগজপত্র যাচাইবাছাইপূর্বক জমিটি পরিমাপ করে বুঝিয়ে দেয়ার আবেদন করেন খলিলুর রহমানের পরিবার। সেই মোতাবেক উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার দলিল এবং সমস্ত কাগজপত্র যাচাইবাছাইয়ে প্রমাণ হয় সমস্ত জমি ও বাড়ি খলিলুর রহমানের পরিবারের। তারপরও আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে মুন্সি পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকেন বিএম শামসুল হক।
গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ও ২২ নভেম্বর মুন্সি পরিবার থানায় দুইটি সাধারণ ডায়রিও করেন। পাশাপাশি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে জাজিরা সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মুন্সি পরিবার। পরে বিআরএস ৮০ নং খতিয়ানের ৪৩ নং দাগের জমিতে জোর করে প্রবেশকরা, জমির রূপ পরিবর্তন করা, বেদখল করা বা শান্তিপূর্ন ভোগ দখলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা থেকে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ করে আদালত।
চলতি বছরের গত ৭ আগস্ট বিকেলে খলিলুর রহমানের মা হালিমা বেগমের কাছে লোকজন পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় রাত ৯টার দিকে বিএম শামসুল হক, কাউসার আহমেদ শান্ত ও কাইয়ুম আহমেদ সাম্য, দেলোয়ার বেপারীসহ লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খলিলুর রহমানের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলেন। বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলে প্রশাসন এসে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গত ১২ নভেম্বর মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বাদি হয়ে জাজিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা বিএম শামসুল হকদের ভয়ে আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না। বর্তমানে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। তাই থানায় অভিযোগ করেছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিএম শামসুল হকের বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি নিরাপত্তায় বসবাস করতে চাচ্ছি।
স্থানীয় মানজারুল ইসলাম মিলন ও শহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন ঘটনাস্থলে আমরা আসি। দেখতে পাই বিএম শামসুল হকের লোকজন মুন্সি বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর করছে ও ইট পাটকেল ছুড়ছে। আমরা শুনেছি, যারা হামলাকারী তারা বলছে ১০ লাখ টাকা না দিলে এই বাড়িতে বসবাস করা অসম্ভব। জমি ও হামলার বিষয় নিয়ে যখন একটি বিচার শালিসির ব্যবস্থা হয় তখন শামসুল হক উপস্থিত থাকেন না। বিভিন্নভাবে মুন্সি পরিবারটিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে শামসুল হক। আমরা এর সমাধান দেখতে চাই।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাজিরা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএম শামসুল হক বলেন, আমি বা আমার লোকজন তাদের বাড়িতেই যায়নি, চাঁদা দাবি করবো কীভাবে? তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
তিনি বলেন, ক্রয় সূত্রে ওইখানে ৬ দশমিক ৬৬ শতক জমির মালিক আমি। কিন্তু আমার নামে রেকর্ড না হয়ে ওই জমি সবগুলো স্থানীয় মান্নানের নামে রেকর্ড হয়। এই ব্যাপারে আমি ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে আদালতে মামলা করছি। আমার ক্রয়কৃত যায়গায় মুন্সি পরিবার সীমানা প্রাচীর করেছে। তারা সীমানা প্রাচীর করলে আমার মামলাতো দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে সবাই ভাববে আমি দখলে নাই। তাই সীমানা প্রাচীর ভেঙেছি।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিন বলেন, ওই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available