মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একশ’ দিন পার হলেও এখনো খাগড়াছড়ি শাসন করছে শেখ হাসিনার আমলের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসন, পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স ও সড়ক বিভাগে এখনো বহাল তবিয়তে পালিয়ে যাওয়া সাবেক সরকারের দোসররা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর সাধন চন্দ্র মজুমদারের একান্ত সচিব। মো. সহিদুজ্জামান ২৫তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার শাপলাডাঙ্গা উপজেলার অধিবাসী।
সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীকে নিবিঘ্নে নির্বাচনী বৈতরণী পার করানোর জন্য হাসিনা সরকারের অনুগত ও বিশ্বস্ত কর্মকর্তা হিসেবে মো. সহিদুজ্জামানকে খাগড়াছড়িতে জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হয়।
অপরদিকে, শেখ হাসিনার আরও এক অনুগত কর্মকর্তা হচ্ছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সুমন চৌধুরী। তিনি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মংস্ইপ্রু চৌধুরীর শিক্ষকসহ হস্তান্তরিত বিভাগগুলোর নিয়োগ, ভুয়া প্রকল্প গ্রহণ ও খাদ্যসশ্যসহ বিভিন্ন খাতে হাজার হাজার কোটি আত্মসাতের সহযোগী এবং পরিকল্পনাকারী।
বৈষম্যমূলক পার্বত্য চুক্তির ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ পাওয়া কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা ও প্রেশনে আসা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল হক বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা ২০১৯ সালে চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ পান। তার এ নিয়োগ পরে আরও দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আরেকজন হলেন প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান। তিনি ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
অভিযোগ রয়েছে, চুয়েট থেকে পাশ করা মো. মাকসুদুর রহমান ছিলেন পলাতক সাবেক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার দুর্নীতি ও অনিয়মের সহযোগী। মাকসুদুর রহমান সাবেক দুই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের সকল অপকর্মের নায়ক। ফলে বিগত দিনে তাদের পছন্দের বাইরে কোনো ঠিকাদার সড়ক উন্নয়নে কোনো টেন্ডারেই অংশ নিতে পারেননি। এমনকি কোনো ঠিকাদার ভাগ্যক্রমে লটারিতে কাজ পেলেও তিনি তা করতে পারেননি।
অপরজন হলেন খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাবের। তিনি পলাতক সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগের ঔষধ সরবরাহ থেকে শুরু করে সকল টেন্ডার হয়েছে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ইচ্ছায় ও সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাবেরের সিদ্ধান্তে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সারা দেশের প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হলেও খাগড়াছড়ির প্রশাসন চলছে আগের সরকারের পছন্দের জনবল দিয়েই। এই নিয়ে জেলার সচেতন মহলের মাঝে বিরূপ মনোভাব বিরাজ করছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available