রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের পীরগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করাসহ অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৭নং বড় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিমের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ইউনিয়নের ৮ জন সদস্য হারুন মিয়া, শিমুল, তাহাজুল, শাহিন, মরিয়ম, ফাতেমা, আশরাফুল ও আবু তাহেরসহ স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউলের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক এলাকাবাসীর স্বাক্ষরে অনাস্থাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত ও শাস্তি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করলে তথ্য প্রকাশ হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে এলজিএসপি-৩ বরাদ্দকৃত ৪টি প্রকল্প কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পগুলো শতভাগ সম্পন্নে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, প্রকল্পে আপন ছোট ভাই হাফিজ আব্দুন নুর সোহেলকে ঠিকাদার সাজিয়ে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে ৩টি প্রকল্পের মোট ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৫২ টাকা উঠিয়েছে। সরেজমিনে এসব প্রকল্পের অস্তিত্ব মেলেনি।
ইউনিয়নের বেকার যুবক ও যুবতীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আয় বর্ধক ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ না করেই বরাদ্দের ৭৫ হাজার টাকা, কাজ সম্পন্ন না করেই ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর পাড়ে বিনোদন পার্ক স্থাপনের নামে বরাদ্দের ২ লাখ টাকা, পত্নীচড়া বাজার ও আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বরাদ্দের ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৫২ টাকাসহ ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৫২ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থিত ডেলিভারি ধাত্রীদের সম্মানী ভাতা বাবদ ২৪ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ মিলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাবসহ সাবেক স্পিকারের প্রভাব দেখিয়ে এসব অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া। আবার অনেকেই বলছেন, কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। এটিকে সরকারি অর্থ অপচয় ও অনিয়ম-দুর্নীতির বহুল প্রচলিত কৌশল হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। এ বিষয়ে নানা দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারের নামে বরাদ্দ ছিলো ৩ লাখ টাকা। সেখানেও অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারে নিয়োজিত ঠিকাদারের কাছ থেকে জোরপূর্বক ইট, সিমেন্ট, বালি ও ইট ভাটা থেকে ভাটা মালিকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ইট সংগ্রহ করে শহিদ মিনারটি নির্মাণাধীন রয়েছে অথচ কাগজে কলমে প্রকল্প সমাপ্ত দেখিয়ে বরাদ্দকৃত ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া ।
বড় আলমপুর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে নাকি কোনো বরাদ্দই নাই, এখন শুনেছি অনেক টাকা বরাদ্দ আইছিলো ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাকি কাজ না করি সব খাইছে। ইউনিয়ন পরিষদে এমন দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের দরকার নাই, তার শাস্তি এবং অপসারণ চাই ।
বড় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আশরাফুল আলমের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কাছ থেকে বেশ কিছু কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে চেয়ারম্যান। তবে বরাদ্দ হয়েছিলো বরাদ্দের সব টাকা চেয়ারম্যানের কাছে আছে। আমি অনেক দিন চেয়ারম্যানকে কাজের জন্য বলে আসতেছি। সে করবো করবো বলে সময় নিচ্ছে। এতে আমিও মহা বিপদে আছি। অথচ কাগজে কলমে প্রকল্পের সব কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে চেয়ারম্যান সেলিম মিয়ার আপন ছোট ভাই হাফিজ আব্দুন নূরকে ঠিকাদার দেখিয়ে প্রকল্পের সব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া ।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য শিমুল মিয়া জানান, আমি নিজেও তিনটা প্রকল্পের সভাপতি ছিলাম, আমাকে কোনো কিছু না বলেই প্রকল্পের টাকা নিজেই উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সুরুজ তারার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন, কেনো কাজ করা হয়নি। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা তুলেছি তবে কাজ করা হবে আর সব বিষয় চেয়ারম্যান জানে, আমি বেশি কিছু জানি না ।
৯নং ও ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশরাফুল আলম ও আবু তাহেরের কাছে প্রকল্পের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এসব প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি এটা সত্য, তবে প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যান উত্তোলন করে কি করেছে আমরা জানি না। অন্যান্য ইউপি সদস্যরাও জানান এসব প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যান উত্তোলন করেছে তবে কোনো কাজ করা হয়নি।
বড় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রংপুরের স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক (উপসচিব) রায়হান কবির গণমাধ্যমকে জানান, বড় আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available