এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: ঈদ উপলক্ষে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিতে। গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঈদের দিন শনিবার সকাল থেকেই ৩০০ বিঘা আয়তনের এই দীঘির সৌন্দর্যরুপ উপভোগ করতে আসে পর্যটকরা। দীঘিপাড়ের সবুজ মনোরম পরিবেশে আর দীঘির পানিতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে বেড়িয়েছেন অনেকেই। দূরদূরান্ত থেকে এসে এমন স্বচ্ছ জলরাশি দেখে আনন্দিত হচ্ছেন পর্যটকরা। কেউ সাঁতার কাটছেন দীঘির জলে, কেউবা হাটছেন ছায়াঘেরা দীঘির পারে। অনেককেই এ সময় ব্যস্ত ছিলেন সেলফি তুলতে। দর্শনার্থীদের কেউ আবার দীঘির পানিতে নৌকায় চড়ে উপভোগ করেছেন ঈদের আনন্দ। আবহাওয়া ভাল থাকায় দর্শনার্থীরা ঘুরতেও অনেক স্বচ্ছন্দবোধ করেছেন।
জয়পুরহাট শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার এবং বগুড়ার মোকামতলা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এই নান্দনিক দীঘিটিকে দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার মানুষ ট্রেন ও বাসযোগে জয়পুরহাট ও মোকামতলা থেকে এখানে আসছেন। এবার ঈদে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় থাকায় যানজট তেমন নেই। ফলে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। নান্দাইল দীঘিতে এবারের ঈদের ছুটিতে রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিতে এবারের পর্যটকদের আনাগোনা ছিলো সহজ এবং বাধাহীন। অনেকেই এসেছেন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বেড়াতে। দীঘিপাড়ের স্থাপনার নির্মাণ ও কারুকাজ বিমোহিত করেছে ইতিহাস প্রেমীদের।
ঈদকে কেন্দ্র করে ধুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য হরেক পদের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। দীঘি ঘিরে এ সময় দেখা যায় আইসক্রিম, ফুসকা,চটপটি, আচার,শরবত,ঝালমুড়ি,পাপড় এবং জিলাপির দোকান। শিশুরা দীঘির পাড়ে ঘুরতে এসে চড়েছে নাগরদোলা ও চড়কিতে। কেউ কিনেছে রঙিন বেলুন, আবার কেউ কিনেছে হরেক রকম খেলনা। এসময় বাংলা ও হিন্দি গানের পাশাপাশি শোনা গেছে জারিগান।
বগুড়ার সোনাতলা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন মোঃ মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আনন্দ উপভোগ করতে ও খানিকটা স্বস্তি পেতে আজ নাদাইল দীঘিতে এসেছি। দীঘির পরিবেশ আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। কোনো ঝুট-ঝামলা নেই।’
নওগাঁ পৌর এলাকার বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মোটরসাইকেল নিয়ে এই দীঘির সৌন্দর্যরুপ দেখতে এসেছি। ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখে এবং লোকজনের মুখে এই ঐতিহাসিক দীঘির কথা শুনে ঘুরতে এসেছি। নওগাঁ থেকে যদিও দূরত্ব অনেক তবুও ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য এই দুরত্বও আমাদের ভাল লেগেছে। আবার এদিকের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক ভালো। এখানে এসে আমরা সবাই খুবই আনন্দ পেয়েছি।’
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদুল ফিতরে দ্বিগুণ দর্শনার্থী এসেছে। ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় । অন্যান্য বছর ঈদে রাস্তায় যানবাহনের চাপ থাকলেও এবার মোড়ে-মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকায় যানজট হয়নি। দর্শনার্থীরা তাই সহজে চলাফরা করতে পেরেছেন। জয়পুরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,বলে জানা যায়। এবার তাই দর্শনার্থীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘির এপার থেকে ওপার সর্বত্রই ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ঐতিহাসিক এই দীঘিটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন । এছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, পুলিশ বক্স, ফুলের বাগান, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, প্রবেশ পথ, পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিড বোট এবং দীঘির উপর একটি ওভারব্রিজ স্থাপন করলে ভালো হয়। এতে যেমন দীঘির সৌন্দর্য ও গুরুত্ব বাড়বে তেমনি এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও হবে। কর্মসংস্থান হবে এলাকার বেকার যুবকদের।
স্থানীয় পুনট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবারে ঈদে দর্শনার্থী বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা এসেছেন। আশা করছি, প্রতি বছর দর্শনার্থী বাড়তেই থাকবে। তবে এই দীঘিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। নান্দাইল দীঘির স্মৃতি ধরে রাখতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে প্রতি বছর সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় হবে। ’
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, ’আমরা নান্দাইল-দীঘিটির উন্নয়ন করেছি। ইতোমধ্যে পর্যটকদের থাকার জন্য ১টি মাঝারি ধরনের বিশ্রামাগার,পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, প্রবেশ গেট, ২টি নৌকা, বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান, বসার জন্য ১টি ছোট টিনের গোলঘর এবং বড়-ছোট মিলে ৩টি ঘাট স্থাপন করা হয়েছে। দীঘিটি হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে আমাদের আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
কালাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানের মূল্যায়ন হলেও দীর্ঘদিন ধরে নান্দাইল দীঘিটির তেমন কোনো উন্নয়ন হয় নি। এ ঐতিহাসিক দিঘীকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারিভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিকে নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। সাথে বাড়বে সরকারী রাজস্ব আয়ও ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available