সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: বুধবার ১১ ডিসেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে- এমন মন্তব্য করার অভিযোগে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জন প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরি, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদারসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় বক্তব্য দেন ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি সদরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও আল মামুন। অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য রাখি। সেখানে দিল্লি না ঢাকার প্রশ্নে বলা হয়েছিল, দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না।
আনিসুর রহমান বলেন, এরপর ওই ইউএনও আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় তিনি তাঁর অঙ্গ ভঙ্গিতে এবং আমাদের ছলে কৌশলে বলার চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমোরো (আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ বা আগামীকাল)।
তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে কথা বলা শুরু করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই ইউএনওকে প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদারকে নির্দেশ দেন। সচিব মো. মোখলেসুর রহমান ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার সঙ্গে আমি একমত। যারা আমার সঙ্গে একমত হবে না, তাহলে আমি চলে যাব।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যে এই ইউএনও বদলি হবে এবং আমি আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে ফিরে গিয়ে তাঁকে সাসপেনশন করব। আমি পাবলিক্যালি বলে গেলাম, এত দুঃসাহস? এখনো যারা পরিবর্ধিত সরকারের পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। যদি কোনো পুরুষ বা কোনো পদ-পদবিধারী কেউ এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে গোপনে আমাদের সংবাদ দেবেন।
এ সময় ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে সচিবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরি। তিনি বলেন, ইউএনওর বিষয়ে আজই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আল মামুন বলেন, আমি এমন কোনো কথাই বলিনি। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা বলি তখন বিএনপি–জামায়াতের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই ধরনের কথা বলা হয়নি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সদরপুর উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ ইউএনওর পক্ষে কথা বলেন এবং এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানান।
১১ ডিসেম্বর বুধবার রাতে সদরপুর উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রতিবাদ জানান সদরপুর উপজেলা বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সদরপুর উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা। তারা বলেন, ইউএনও কে নিয়ে প্রকাশিত বক্তব্য ও অভিযোগের বিষয়ে জানাচ্ছি যে, পূর্বে সদরপুরে শহিদদের স্মরণে স্মরণ সভা ও সংবর্ধনা সভায় ও সভাশেষে ইউএনও আল মামুন এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি বা কোন সময়েই বলেননি। ইহা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হিসাবে প্রতীয়মান। আমরা সদরপুরের ইউএনও কে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মৌখিক প্রত্যাহারের আদেশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করাসহ সত্যতা যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী, সদস্য সচিব তরিকুল ইসলাম কবির, যুগ্ম-আহবায়ক বাহালুল মাতুব্বর, বাবুল হোসেন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামি সদরপুর শাখার আমির মো. দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি যুবদলের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন, ছাত্রদল নেতা তুষার মাহমুদ, সদরপুর উপজেলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রুমন মাতুব্বর, সদরপুর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হাসিব সিয়াম প্রমুখ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available