ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে আমন ধানের চাষ হয়েছিলো মোট ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চাষকৃত জমি থেকে মোট ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিলো বিঘা প্রতি ১৯/২০ মণ হারে মোট ২৭ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন। কিন্তু আমন মৌসুম মাড়াই শেষে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এবারের আমন মৌসুমে সর্বকালের সেরা বিপর্যয় হয়েছে অত্রাঞ্চলে। উঁচু জমিতে ১৮/১৯ মণ হারে ধান উৎপাদিত হলেও নিচু জমিগুলোতে এবার ধান হয়েছে ৩ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯/১১ মণ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণেই আমন উৎপাদনে এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের অনেক কৃষক।
কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের মাঠের ধান তিনবার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেই ধান ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছি ৩ থেকে ৯/১১ মণ। এতে আমাদের খরচের টাকাই আমরা পায়নি।’
কৃষক স্বপন বলেন, ‘আমার উঁচু জমিতে প্রতি বিঘায় ১৯ মণ হারে ধান পেলেও নিচু জমিতে ধান পেয়েছি ৮ মণ হারে। সেটা এর আগে কোনো দিনই হয়নি। তবে উপজেলা কৃষি অফিসাররা যদি একটু মাঠে এসে আমাদের চাষবাসের দিকে নজরদারি করতেন তাহলে এভাবে পানিতে ফসল তলিয়ে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না।’
রামনাথপুর এলাকার কৃষক ইমরান বলেন, ‘অফিসাররা সারা বছরে একবারও মাঠে আসেন না। রোদে সবজি পুড়লেও না। আবার পানিতে ডুবলেও না। অথচ, কৃষকদের পাশে থাকার জন্যই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন সরকার।’
কৃষক রায়হান খাঁ জানান, এ বছর আমন মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন। উঁচু এবং নিচু মিলে মোট ধান পেয়েছেন ১৩০ মণ। অথচ তার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৮০/৩৯০ মণ। তিনি তার এই বড় ধরনের বিপর্যয়ের জন্য জমিতে জলাবদ্ধতাকে দায়ী করেন।
বাঘহাছলার ধান চাষি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। অথচ ধান পেয়েছি মাত্র ১৯ মণ! বর্তমানে বাজারে ধানের দাম এক হাজার চারশত টাকা মণ। অথচ তার প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে তিন হাজার একশ টাকার বেশি।’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, এ বছর ঠিক কী পরিমাণ ধান কম উৎপাদন হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখন পর্যন্ত আমার কাছে নেই। তবে অতি বৃষ্টির কারণে আমনের জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে আমার কিছুই করার নেই।
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসক সুবীর কুমার দাশ বলেন, ব্লক সুপার ভাইজারদের সমন্বয়ে কৃষকের সাথে কাজ করার দ্বায়িত্ব কৃষি কর্মকর্তার, উপজেলা প্রশাসকের নয়। তবুও বিএডিসির সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা এবার ৩০ কি.মি. খাল খনন করবে। যেটা মুলাডুলি এবং দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কৃষকদের ফসলকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available