কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার শাকপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ কে এম ইউসুফের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষকগণ এবং অভিভাবকরা। বিগত ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে তিনি অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া, শিক্ষক-কর্মচারি-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ, পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি নেয়া এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করাসহ নানা অভিযোগ উঠে অধ্যক্ষ এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী আবুল কালাম পাটোয়ারি, সাইফুল ইসলাম ও আবুল কালাম আজাদ জানান, বিগত স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় এ কে এম ইউসুফকে অবৈধ উপায়ে সকল প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ দেন তৎকালীন সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরি নজরুল। তৎকালীন এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরি (নজরুল) এর সহযোগিতায় অস্ত্রের মুখে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও এলাকার মানুষদের বাধ্য করে বিশাল নিয়োগ বাণিজ্যের বিনিময়ে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ইন্টারভিউর দিনে মারধর করা হয় গভর্নিং বডির সদস্য মাস্টার মো. আশরাফ উদ্দিন ভূইয়া ও ছাদেক হোসেন খন্দকারকে।
পরে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ইন্টারভিউ’র দিনে নিয়োগ বোর্ডের ২ জন সদস্য জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. গোলাম মোস্তফা ও সহকারী শিক্ষক (গণিত) মো. জাকির হোসেন নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন না। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে উপাধ্যক্ষ ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করে জুনিয়র প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিষয়ে উপাধ্যক্ষ ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. গোলাম মোস্তফা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট পিটিশনের রায়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে মর্মে রায় প্রদান করা হয়। নিয়োগ রেজুলেশনে গভর্নিং বডির সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে 'অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাধ্য করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে অধ্যক্ষ পদে এ কে এম ইউসুফের নিয়োগটি সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, অধ্যক্ষ এ কে এম ইউসুফের কর্মকাণ্ডের কারণে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অধ্যক্ষের নেতিবাচক ব্যবহারের কারণে মাদ্রাসাটি আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। পরীক্ষার ফি, ফরম ফিলাপ ফি, রেজি ফি, মার্কসীট ও সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধ্যক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা নেন, যার পরিমাণ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশী । গরীব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা টাকা দিতে না পারায় তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এই অধ্যক্ষ। অনেক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা দিতে না পেরে মাদ্রাসা ত্যাগ করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুজাহিদ হাসান, আরিফুর রহমান ও ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালেব জানান, শাকপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ.কে.এম ইউসুফ স্যার বিগত জুলাই মাসে দেশ ব্যাপী সংগঠিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। এমনকি বিগত সময়ে মাদ্রাসার নানা অনুষ্ঠানে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারীদের তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানাতে কঠোরভাবে নিষেধ করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় ৩ মাস শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রাখা হয়, যা বিগত মাস থেকে চালু করা হয়।
এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নজরুল জানান, অধ্যক্ষ সাহেবকে অবৈধ উপায়ে এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছের মানুষ হওয়ায় কোন নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি যা বলেন তা এখানেই নিয়মে পরিণত হয়। ১৬ অক্টোবর অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করায় অধ্যক্ষ সাহেব বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে ছাত্রদের মারধর করান এবং ছাত্রীদের ওড়না ধরে টানাটানি করান। উনার অত্যাচারের মাত্রা সীমাহীন। উনার অপকর্মের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতি. জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), মাদ্রাসা অধিদপ্তর বরাবর অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো কোন সমাধান হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে শাকপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ কে এম ইউসুফ জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যে । কিছু শিক্ষক দুর্নীতি করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে। এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। উনার নির্দেশমত আমরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে কোন্দল থাকতে পারে। ফলে এ বিষয়গুলো নিয়ে সবাই বিচলিত। এখানে অনেক অনিয়ম ছিল। আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এসব অনিয়মগুলো দূর করার জন্য কাজ করেছি। অনেকটা অনিয়ম দূর হয়েছে। সকল অনিয়ম দূর করে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available