মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়নের চর তিল্লী বাজারে প্রতিদিন গড়ে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি হয়। স্থানীয় কৃষকরা এই বাজারে আড়াই থেকে তিন হাজার মণ বেগুন বিক্রি করে, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেগুন উৎপাদন হয় সাটুরিয়া উপজেলায়। গত বছর ৩৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হলেও এ বছর তা বেড়ে ৪৪৯ হেক্টরে পৌঁছেছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০১ হেক্টর বেশি। এ বছর বেশি চাষ হয়েছে পার্পল কিং জাতের বেগুন। প্রায় ২৭০০ কৃষক চর তিল্লী, পাড় তিল্লী, তিল্লীর চর, গোপালপুর, রোউহা, শিমুলিয়া ও হরগজ গ্রামে এই বেগুন চাষ করছেন।
সরেজমিনে চর তিল্লী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার চর তিল্লী বাজারে প্রতিদিন কৃষকরা তাঁদের বেগুন নিয়ে আসেন এবং পাইকাররা দাম দর করে তা কিনে নেন। বিকেল পর্যন্ত চলে এই বেচাকেনা।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরতিল্লীর এই বাজারটিতে বছরের ৬ থেকে ৭ মাস শুধু বেগুনই বিক্রি হবে। অন্যান্য বছর থেকে এবার বেগুন চাষে লাভবান কৃষক। এই বেগুন জেলার চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে যায় ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, কুমিল্লা, গাউসিয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।
এ বিষয়ে চর তিল্লী গ্রামের কৃষক তোফাজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে বেগুন চাষ করছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, তবে বাজারের স্থিতিশীলতা দরকার। দাম প্রতিদিন বদলে যায় কোনো দিন ১২শ টাকা, আবার কোনোদিন নয়শ টাকা।
তিল্লী চর পাড়ার একুশে মোড় এলাকার ইউনুস বলেন, প্রতি বিঘায় আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত। এ বছর চারা, সার, কিটনাশকের দাম বেশ বাড়তি। তাই খরচ বেড়েছে। তবে, আগের বছরের চেয়ে দামও ভালো পাচ্ছি।
একই ইউনিয়নের পাড় তিল্লী গ্রামের লিটন বলেন, আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে পার্পল কিং জাতের বেগুন চাষ করেছি। তাতে করে আমার এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। গাছ এখনো সুন্দর আছে আরও ৭/৮ বার বিক্রি করতে পারবো।
পাইকারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাজারে বেগুনের দাম এবং মান খুব ভালো, যা দেশের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। মালেক ব্যাপারি বলেন, আমি প্রতিদিন ৬০০ মণ বেগুন কিনি এবং তা ঢাকার বাজারে পাঠাই।
ব্যাপারী মাসুদ, আসলাম ও সোহেল বলেন, এই বাজারে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা আসেন বেগুন বিক্রি করতে। এ এলাকার বেগুনের মান ভালো, তাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি নিমসা, কুমিল্লা, গাউসিয়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়।
তিল্লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ধলা বলেন, আগে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি অন্য জায়গায় নিয়ে বিক্রি করতেন, যা তাদের জন্য ছিল কষ্টকর এবং লাভ কম ছিল। আমরা তাদের জন্য চর তিল্লী বাজারে একটি আড়ত তৈরি করেছি, যেখানে কোনো আড়তদারি নেওয়া হয় না।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাটুরিয়ায় প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি উৎপাদন হয়। আর এ মৌসুমে শুধু বেগুন উৎপাদন হয়েছে ৪৪৯ হেক্টর জমিতে যা গত বছরের চেয়ে ১০১ হেক্টর বেশি। এ মৌসুমে বেগুনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের সহায়তা দিয়ে আসছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available