ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির টাকা ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব), ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতার মাঝে ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর উপজেলার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ৮ জন ডিলারের মধ্যে ৪ জন ডিলার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ও ৩ জন ডিলার অনুপস্থিত থাকার কারণে বাকি ১টি ডিলার রেখে সব পুরাতন ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল করে উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটি। পরে উপকারভোগীদের কথা চিন্তা করে ১৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার সমন্বিত সভায় চাল বিতরণ করার জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে ইউপি সচিবদেরকে ডিলার সাজিয়ে চাল বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৪নং ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের স্ত্রীর নামে ডিলারশীপটি শহিদুল ইসলামের প্যারালাইজড জনিত কারণে শয্যাশায়ী হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা বাতিল করা হয়নি।
হিসেব করে দেখা গেছে, ৩ মাসে ৫ হাজার ৬ শত জন সুবিধাভোগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা লাভ থাকে যা ইউপি সচিবরা ছাড়াও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বিএনপির কিছু নেতা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬ শত জন। এর মধ্যে ১নং বুলাকীপুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৫৪৭ জন, ২নং পালশা ইউনিয়নে ১৪৭৪ জন, ৩নং সিংড়া ইউনিয়নে ১৬৬৩ জন ও ৪নং ঘোড়াঘাট ইউনিয়নে রয়েছে ৯১৬ জন। গত ৩ মাসে এসব সুবিধাভোগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ইউপি সচিবদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ১৩ টাকা কেজি দরে চাল উত্তোলন করে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে কেজি প্রতি ২ টাকা করে লাভের প্রথম মাসের টাকা আমাদের নিকট জমা রয়েছে। কিন্তু পরের দু’মাসে যে চাল বিতরণ করা হয়েছে এ টাকার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সচিব জানান, পরের দু’মাসের লাভের যে টাকা তা বিএনপির নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। আপনারা দায়িত্বে থাকার পরেও কিভাবে বিএনপি নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না, যা বলার ইউএনও স্যার বলবে। একই কথা বলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আরও ২ ইউপি সচিব।
তবে ২নং পালশা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা ইউপি সচিব বিষ্ণু পদ সরকার জানান, ১ম মাসের লাভের টাকা আমাদের নিকট থাকলেও পরের দু’মাসের টাকার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাহলে চাল কে বিতরণ করেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রানীগঞ্জ বাজারের বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান রঞ্জু আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের গাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছেছে, চাল বিতরণ করে টাকাগুলো হিসাব নিকাশ করে পাঠিয়ে দিবেন। আমি আমার এই পজিশন ও দায়িত্বে থেকে সব বিষয়ে তো বেশি কিছু বলতে পারি না। আপনারা এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলতে পারেন।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান রঞ্জু জানান, এ সব কিছুর হ্যান্ডেলিং করেছে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং বুলাকিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান লাবলু । আমি শুধু ডিও করেছি, ডিলাররা চাল বিক্রির পর টাকাগুলো কারেকশন করেছি। খরচ-খরচা করে যত-সামান্য লাভের টাকা আমাদের কাছে আছে।
অপরদিকে, বিএনপি নেতা মাহফুজার রহমান লাবলুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ইউএনও মহোদয়ের পরামর্শে চাল বিতরণ কার্যক্রমে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। আমি না করলে কেউ না কেউ তো করতই। এতে কোনো সমস্যা? এছাড়াও লাভের টাকার ভাগবাটোয়ারার প্রশ্নে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, টাকাকে দিলো কে নিলো এটা বড় কথা না, বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে হয়েছে কিনা এটাই বড় কথা!
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইউনুস আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুপস্থিতিতে আপদকালীন সময়ে ইউপি সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে ওনারাই ভালো বলতে পারবেন। এখানে আমার কিছু বলার নেই। আর লাভের টাকা কোথায় কার কাছে জমা থাকবে, না রাজস্ব খাতে জমা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান নেই। আমি এর সাথে কোনোভাবে জড়িত না, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতাদের মাঝে লাভের টাকা ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী আ. লীগ দলীয় কোন লোকদেরকে কোন সুবিধা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই, এজন্য তাদের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। আ. লীগ দলীয় লোকজনদেরকে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ না থাকলে কি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের লোকদেরকে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না তা অবশ্যই নেই। তবে আমি কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি খুব সাবধানতার সাথে যেন উপকারভোগীদের মাঝে চালগুলো বিতরণ করা হয়। আমার কাছে যেন কোনো রকম অভিযোগ না আসে। লাভের টাকা কে নেবে, রাজস্বখাতে জমা হবে কি না আমার জানা নেই, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available