সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দীর্ঘ দেড় যুগ পর রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছিল দুর্ভোগের শিকার পৌরবাসী। কিন্তু কার্পেটিংয়ে সিডিউল বহির্ভূতভাবে পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়মের কারণে তা বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা সড়ক সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শহরবাসীর অভিযোগ, তামান্না সিনেমা হল মোড় থেকে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লোকজন। রাস্তাটি মেরামতে বার বার দাবি জানানো হলেও নির্বিকার ছিল সে সময়ে দায়িত্বে থাকা পৌর মেয়র।
এক্ষেত্রে পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের যোগসাজস রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন থেকে এখানে কর্মরত থাকায় তাদের একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার লোকদের নিয়ে তাদের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামকাওয়াস্তা কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। একারণে শহরের প্রায় ৮০ ভাগ সড়কই বেহাল দশায় পতিত হয়েছে।
শহরবাসীর জোরালো দাবির মুখে গত বছরের প্রথম দিকে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কোনরকমে বড় বড় গর্তগুলো ভরাট করা হয়। কিন্তু কাজের মান নিম্ন হওয়ায় মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেইসব কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি আগের চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়।
জুলাই বিপ্লবের পর পৌর মেয়র পালিয়ে যায় এবং সরকারিভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী দায়িত্ব নেয়ার পর আবারো দাবি উঠে রাস্তাটি সংস্কারের। এর প্রেক্ষিতে চলতি মাসের প্রথম দিকে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেন প্রশাসক। নিয়মানুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ৬৭ লাখ টাকায় কাজটি পায় নীলফামারীর এম এস সাইকি বিল্ডার্স।
গত ১ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় সংস্কার কাজের। এরপর ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কার্পেটিং। কিন্তু মাত্র একদিনের মাথায় তা উঠে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় ২৬ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রিমোন, প্রিন্স, মারুফ, সানী, তৌহিদসহ অন্যান্যরা সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটের সামনে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে ছাত্রদের বক্তব্য হলো, সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। এক সেন্টিমিটার পুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেটা করছে না। তাছাড়া নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার করায় মাত্র একদিনের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দেয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পা,ই ভাঙ্গা পাথরের জায়গায় গোটা পাথর ও বিদেশি বিটুমিন দেয়া হয়েছে। এতে কার্পেটিং কমপেক্ট হচ্ছে না। তাই উঠে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে কাজ করার জন্য বলেছি।
সড়কের সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, পাথরের সাইজ ঠিক না থাকায় আমি কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার তা শোনেনি। তাছাড়া যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে তা এখানে প্রযোজ্য নয়। কেননা এটা খুবই ব্যস্ততম সড়ক। ব্যবহৃত বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় লাগে, তাই দেশি বিটুমিন দিতে বলেছিলাম। কারণ দেশি বিটুমিন দ্রুত জমাট বাঁধে। সে কথাও শোনেনি ঠিকাদারের লোকজন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জাকির হোসেন মেনন বলেন, সিডিউলের বাইরে কাজ করিয়ে নিচ্ছে প্রশাসক। শুধু ভাঙ্গা স্থানে মেরামতের কথা থাকলেও এখন পুরো রাস্তায়ই কার্পেটিং করিয়ে নিচ্ছে। এমতাব্স্থায় মানসম্পন্ন কাজ এই বাজেটে করে দেয়া সম্ভব নয়। তবুও আমরা এক নম্বর বিটুমিন ব্যবহার করেছি। এই বিটুমিন কমপেক্ট হতে সময় নেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সময় দিতে চাচ্ছে না। তাছাড়া পাথর ও বিটুমিন পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছি। এমতাবস্থায় ছাত্ররা অহেতুক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি।
এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এস সাইকি বিল্ডার্সের মালিক রুবেলের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, কাজে অনিয়ম পাওয়ায় ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি এবং সিডিউল অনুযায়ী ভাঙ্গা পাথর ও দেশি বিটুমিন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ঠিকভাবে কাজ না করলে নিয়ম মাফিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available