নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর মনোহরদীতে হারিয়ে যাওয়ার পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘ঘোড়দৌড়’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের অর্জুনচর গ্রামের যুবসমাজের উদ্যোগে এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ধানক্ষেতই যেন খেলার মাঠ। মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে একটি জায়গা চিহ্নিত করা। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করে স্থানীয় লোকজন। খেলা শুরুর আগেই ঘোড় দৌড়ের মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। দুপুরের পরপরই প্রতিযোগিতা শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে হাজারো নারী-পুরুষ, বৃদ্ধরা এসে জড়ো হয় ঘোড়দৌড় উপভোগ করতে। কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ বসে।
শীতের পড়ন্ত বিকেলে প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া গুলো মাঠের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্তে ছুটছে প্রাণপণে । ঘোড়ার গতি বাড়াতে পিঠে বসানো হচ্ছে চাবুকের ঘা। উপস্থিত দর্শকেরা হর্ষধ্বনি ও তালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে সওয়ারিদের। প্রতিযোগিতায় নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল থেকে ১২টি ঘোড়া অংশ নেয়। ঘোড়ার সওয়ার হিসেবে ছিলো বিভিন্ন বয়সের শিশুরা।
ঘোড়দৌড় এক কিলোমিটার জায়গা জোড়ে দুইটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তিন রাউন্ড করে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বড় গ্রুপে ময়মনসিংহ জেলার সঞ্জু মিয়ার ঘোড়া প্রথম, টাঙ্গাইলের সখিপুরের আবুল হাসেমের ঘোড়া দ্বিতীয় এবং একই উপজেলার নিলয় মিয়ার ঘোড়া তৃতীয় স্থান অধিকার করে। আর ছোট গ্রুপে প্রথম হয়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সোহান মিয়ার ঘোড়া, দ্বিতীয় টাঙ্গাইলের সখিপুরের সিয়ামের ঘোড়া এবং তৃতীয় কিশোরগঞ্জে পাকন্দিয়া উপজেলার আমির উদ্দিনের ঘোড়া।
বড় গ্রুপে প্রথম পুরস্কার হিসেবে একটি গরু, দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ভেড়া এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে একটি পেশার কুকার দেওয়া হয়। আর ছোট গ্রুপে প্রথম পুরস্কার হিসেবে একটি খাসি, দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে একটি ভেড়া এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি পেশার কুকার দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বড় গ্রুপে প্রথম ময়মনসিংহ জেলার সঞ্জু মিয়া বলেন, ঘোড়া দৌড় খেলা আমার শখ। যেখানে ঘোড়া দৌড়ের খবর পাই সেখানেই ছুটে যাই। আয়োজকরাও খবর দেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় খেলা থেকে পুরস্কার জয় করে বাড়ি নিয়ে যাই। সবাই খুশি হয়।
আরেক ঘোড় দৌড় বিধ সোহান বলেন, আমার দাদা ঘোড় দৌড় অংশ নিতেন। এরপর বাবা ও তারপর আমি পড়ালেখার পাশাপাশি খেলায় অংশ নিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমন্ত্রণ পাই, অংশ নিয়ে ভালো লাগে।
তবে খেলায় সবার আকর্ষণ কেড়েছে ৮ বছরের ক্ষুদে দৌড়বিদ দিঘি। সে আবুল হাশেমের ঘোড়া নিয়ে অংশ গ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। দিঘি বলেন, ঘোড়া আমি খুব পছন্দ করি। বাবার হাত ধরে দৌড় খেলা শিখেছি। এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলায় অংশ নেই। সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।
ঘোড়দৌড় দেখতে আসা দর্শক মাজহারুল হোসেন তালুকদার বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা ঘোড়দৌড়। আগে বিভিন্নস্থানে খেলাগুলো দেখা যেতো। কিন্তু এখন সচরাচর আর দেখা যায় না। এখন ফেসবুক আর ইউটিউবে নতুন প্রজন্মরা দেখতে পায়। এই খেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।
প্রতিযোগিতার আয়োজকরা জানায়, ঘোড়দৌড় হচ্ছে গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা চলে আসছে। প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিযোগিতার আয়োজক রমজান হোসেন তালুকদার বলেন, এলাকার যুব সমাজের উদ্যোগে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে এর আগে কখনো ঘোড় দৌড় খেলা হয়নি। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তোলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর খেলায় যুব সমাজ মেতে থাকলে তারা মাদক ও অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকে। তাদের চিত্ত বিনোদনের অভাব পূরণ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অর্জুনচর গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুল হাই, মোবারক হোসেন তালুকদার, মিল্টন তালুকদার প্রমুখ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available