স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর: তিন ফসলি জমি থেকে কাটা হচ্ছে মাটি। সেই মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়। ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাংগুরী ও চিনাইল এলাকার ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাংগুরী ও চিনাইল এলাকায় শত শত বিঘা জমিতে এই মৌসুমে ধান ও সরিষার আবাদ করে থাকে। বর্তমানে ওই এলাকায় নীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমাহার। সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। যেন হলুদ শাড়ি বিছিয়ে নতুন করে সেজেছে ফসলের মাঠ। তাই ফলন এবং লাভের আশায় বুক বেঁধেছে এ অঞ্চলের চাষীরা। অন্যদিকে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অনেকে। অন্যদিকে কৃষকদের অনেকেই তাদের জমিতে করেছে ধানের চারা। সেখানেও দেখা যায় সবুজের মনমাতানো সৌন্দর্য। পাশেই রয়েছে নানা বর্ণের শীতকালীন সবজি ক্ষেত। তারই মাঝে ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটের ভাটায়। এতে করে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি মাটির ট্রাক চলাচল করায় রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে।
ভূমি মালিক ও কৃষকরা জানান, এলাকার বেশির ভাগ কৃষক এবং জমির মালিকরা কেউ নিজে কেউবা বর্গা দিয়ে ধান ও সরিষা রোপণ করেছে। তবে কিছু জমির মালিকরা নানা কারণে এ বছর চাষাবাদ করতে পারেনি। উপজেলার সাজনধরা এলাকার যুবদলের কর্মী মোজাম্মেল হোসেন, শ্রমিকদলের নেতা মো. লিটন, বান্ধাবাড়ি এলাকার শহিদুল ইসলাম ও রজব আলী প্রভাব খাটিয়ে সেই পতিত জমি থেকে কিছুদিন ধরে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। জমির কয়েকজন মালিককে কিছু টাকা দিলেও অনেককে না জানিয়েই নির্বিচারে মাটি কাটছে। ভেকু লাগিয়ে অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। প্রথমত সন্ধ্যার পর থেকেই মাটিকাটা শুরু হতো এখন দিনের বেলায়ও মাটি কাটছে। গভীর রাত পর্যন্ত মাটি কাটার পর তা নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী ইটের ভাটায়। এখন দিনের বেলাতেও মাটি কেটে গর্ত করা হচ্ছে। এতে মাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হলেও কমে যাচ্ছে উর্বর আবাদি জমি। ফলে কমছে খাদ্য উৎপাদন। অন্য দিকে মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাকের দাপটে রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
চিনাইল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা মাটি কাটছে তারা নাকি বিএনপির অনেক বড় নেতা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোড় করেই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চাচার জায়গা থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে চাচাকে বলার পর তিনি বলেন, সে নাকি জানেই না তার জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে।
বাংগুরী গ্রামের এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, অনেক না করছি ওরা তো আমাদের কথা শুনেই না। আমরাও ভয়ের লাইগা কিছুই কই না। জমিগুলার মাটি কাইটা সর্বনাশ কইরা ফালাইছে। আপনারা কিছু একটা করেন।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিন রাত মাটি বাহি ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে আশপাশের প্রায় সব রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধুলাবালির কারণে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেওয়াইর থেকে কুড়ালকাপা সড়কটির বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। স্থানীয় অনেকেই প্রতিবাদ করলে তাদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় পাশের মালিকরা ক্ষতির আশঙ্কায় তাদের কাছে মাটি ও জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মাটি ব্যবসায়ীদের দাপটে এলাকায় কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পায় না। মাটির গর্তের কাছে একটি ভেকু (মাটি খনন যন্ত্র) মেরামত করছেন রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবকের কাছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা মোজাম্মেলসহ আরও কয়েকজন এই মাটির ব্যবসা করছেন।
মাটি ব্যবসায়ী কালিয়াকৈর উপজেলা যুবদলের কর্মী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মাটি কাটছি না- সেখানে একটি পুকুর খনন করছি। পুকুর করে মাছ চাষ করবো।
ঢালজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানানোর পর আমি তাদের বলে দিয়েছি আর এক ইঞ্চি মাটিও কাটা যাবে না। মাটি কাটা হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউছার আহাম্মেদ বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করার জন্য। এরপরও কাটা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available