মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে সরিষার ফুলে মৌচাষ করে লাভবান হচ্ছে মৌয়ালরা। দিগন্ত জুড়া চোখ জুড়ানো সরিষার আইল আর পতিত জমিতে মৌচাষে এ অঞ্চলের অনেকেই এগিয়ে আসছে। ফসলের মাঠে মৌমাছি পালন করে ফুল ফলের পরাগায়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে চাষ করা মধুর চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভের মুখ দেখছে চাষির। আর জাতীয় মৌচাষ ফাউন্ডেশন বলছে, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আগে মধু আমদানি করলেও এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ রপ্তানিও হচ্ছে।
সরজমিনে মধুপুর গড়াঞ্চলের ঘাটাইল, গোপালপুর ধনবাড়িতে সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মৌ গন্ধে বিমোহিত। চারিদিকে যেন চোখ জুড়ানো হলুদ গালিচা শোভা পাচ্ছে। এ সময়ে মৌ চাষীরা সরিষার জমির আইল ও পাশের খণ্ড খণ্ড জমিতে বাণিজ্যিক উপায়ে মৌ বক্স বসিয়ে আহরণ করছে মধু। প্রাকৃতিক উপায়ে ভেজালমুক্ত থাকায় চাহিদার কমতি নেই। এলাকা থেকেই বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকেরা এসে পাইকারি খুচরা ৪শ থেকে ৫শ টাকা দামে কিনে নিচ্ছে। গড় অঞ্চলের কয়েক উপজেলায় মাঠে মাঠে এমন মৌ চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছে চাষীরা। কম খরচে ঔষধিগুণ সম্পন্ন মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছলতা পাচ্ছে তারা। এ সময়টা এ এলাকায় মৌচাষ তাদের মতে ভরা মৌসুম হলেও সারা বছর তারা সুন্দরবন, দিনাজপুরসহ দেশে প্রান্তে মৌচাষ করে মধু আহরণ থাকে বলে জানান।
মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সময় মাঠে মাঠে হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি মধু আহরণ করে থাকে। সকালের কচি রোদের পরে মাছিরা বের হয় ফুলে ফুলে। নিয়ে আসে মধুর উপকরণ। বক্সে ফিরে মৌচাকে বসে বসে মধু দেয়। চাষীরা সপ্তাহে এক দুবার মধু তোলে। এভাবে মৌ আর মৌয়াল সরিষার এ মৌসুমে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। গুণগত মান ভালো থাকায় আহরিত মধু যাচ্ছে দেশের বাইরেও। বিভিন্ন কোম্পানিও ছুটে আসছে মধু নিতে। মৌয়াল সকাল বিকেলে রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিচর্যার কোনো কমতি দিচ্ছে না। ফলে ভালো লাভ পাচ্ছে চাষীরা। এভাবেই সরিষার ফুলের সময়কার দিনগুলো পাড় করছে। নিজস্ব মেশিনের দ্বারা নিজের হাতেই তোলে চাষীরা।
খুলনার সুন্দর বন থেকে আসা মৌ শ্রমিক সারা বছরই বিভিন্ন মৌসুমে অঞ্চল ভিত্তিক ফুল ফসলের মাঠে মৌমাছির বক্স নিয়ে ছুটে চলে। নেই তাদের ক্লান্তি। মধু আহরণের নেশায় ঘুরে বেড়ান ফুলের পথে প্রান্তরে। দরদাম নিয়ে নেই ভাবনা, যেন ফুরসত নেই এমনটাই জানালেন তিনি।
মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের মৌচাষি ফজলু মিয়া (৩২) জানান, তিনি তিন বছর যাবত এ পেশায় এসেছে। শীতকালে গোপালপুর ঘাটাইল এলাকায় মৌবক্স বসিয়ে দুই মাস মধু আহরণ করেন। পরে দিনাজপুর সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মধু আহরণ করে থাকে। বছরে ৩০-৩৫ মন বিক্রি করতে পারে। ১০ হাজার টাকা মন দামে বিক্রি হয় বক্স বসানো এলাকা থেকেই। এতে যে অর্থ আসে তা দিয়ে সংসার চালাতে কোন সমস্যা হয় না।
ঘাটাইলের নর্জনা গ্রামের মৌচাষি এনামুল হক (৩৫) জানান, সরিষায় ৬৫টি বক্স থেকে তিন টন মধু পান। ৫শ টাকা কেজি দরে কোম্পানির লোকেরা বাড়ি থেকেই কিনে নেন। তার দাবি চিনির দাম কমানো গেলে তাদের সুবিধা হবে। লাভের গতি বাড়বে।
মধু ক্রেতা আমাদের ই ডট কম এর কো অর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, সরাসরি ফসলের মাঠে এসে নিজে দেখে মধু কিনে নিচ্ছে। তাদের কাস্টমারদের একদম ন্যাচারাল মধু দিবেন এমনটাই প্রতাশার কথা জানালেন তিনি।
জাতীয় মৌচাষ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু হানিফ খান বলেন, ঔষধ ও কসমেটিকস শিল্পে মধুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আগে এসব শিল্পের জন্য বিদেশ থেকে মধু আমদানি করা হতো। এখন চাষীদের সক্ষমতায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও হচ্ছে। এটা যদি আরও সম্প্রসারণ হয় তাহলে দেশের জন্য আরও ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রাকৃতিক উপায়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ হলেও সারা বছরই দেশের বিভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ফসলের মাঠে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক বিষ প্রয়োগের ফলে মৌমাছির খাদ্যে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। এ জন্য সচেতনতার পাশাপাশি ঔষধ শিল্পের কাঁচা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণ সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মৌ চাষ হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দ্বার এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available