আফজাল হোসেন রুমেল, বড়লেখা: উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা ঢেউ খেলানো দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান, আকাশস্পর্শী পাথারিয়া পাহাড় ও নয়নাভিরাম হাকালুকি হাওর পর্যটকের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। তার মধ্যে দেশের অন্যতম আকর্ষণী মাধবকুন্ড জলপ্রপাত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।
অনিন্দ্যসুন্দর নিসর্গের মায়াপুরী মৌলভীবাজার জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা উপজেলায় পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। এরমধ্যে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড, এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ও পাখপাখালির অভয়াশ্রম হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পাখিবাড়ি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আশপাশ এলাকার চা বাগান ও পাহাড়ি টিলা যে কারও মন জুড়াবে। বড়লেখার এসব মনোমুগ্ধকর স্থান পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত: পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২শ’ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে পানি। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অঝরধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটির পরিচিতি প্রকাশ পায়। বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঁঠালতলী) ইউনিয়নের গৌরনগর মৌজায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, সুবিশাল পর্বত গিরি, শ্যামল সবুজ বনরাজি বেষ্টিত ইকোপার্ক, পাহাড়ী ঝরনার প্রবাহিত জলরাশির কলকল শব্দ-সবমিলিয়ে মাধবকুণ্ড বেড়াতে গেলে পাওয়া যায় এক অন্যরকম আমেজ। জলপ্রপাতের পাশ ঘেঁষে যাওয়া ছড়াটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম পাখি, মৎস্যকন্যা, মাছ প্রভৃতির দৃষ্টিনন্দন সব ভাস্কর্য।
হাকালুকি হাওর: বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হচ্ছে হাকালুকি হাওর, পাঁচটি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওরটি সিলেট ও সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। হাওরের ৪০ শতাংশ বড়লেখা, ৩০ শতাংশ কুলাউড়া, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জ এবং ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। হাওরটির আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর বা ১৮১.১৫ বর্গ কিমি। ২৪০টি বিল নিয়ে গঠিত দেশের বৃহত্তম এই হাওর এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমাহার হাকালুকি হাওর। জলবায়ুর ভিন্নতার কারণে হাকালুকি একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে মনোমুগ্ধকর এ রূপ যেন রূপ নয়, আবহমান বাংলার ঝলমলে এক জীবন্ত ছবি।
বর্ষা এবং শীত উভয় ঋতুই ঘুরে বেড়ানোর জন্য উপযোগী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব লীলাভূমি হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে এই হাওড়টি একটি অথৈ সাগরে পরিণত হয়। সমুদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি। আবার শীতকালে সবুজের মাঝে অতিথি পাখিদের মিলনমেলা এছাড়া হাওরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। দূর থেকে সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয়, কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষার মাঠ। ফুল নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষের ছবি জায়গা পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পাখি বাড়ি: বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের হাল্লা পাখিবাড়িটি দুই দশকের বেশি সময় ধরে পাখিদের নিরাপদ ঠিকানা। বারো মাস সেখানে ঘর বেঁধে পাখিরা বসবাস করছে। এদিকে বছরজুড়ে দেশি-বিদেশী নানা জাতের পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে হাকালুকি হাওরের হাল্লা এলাকায় মনোহর আলী মাস্টারের বাড়ি। তবে শীত এলে পাখির সমাগম বৃদ্ধি পায়। তখন হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা যেনো পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সাথে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় মনোহর আলীর বাড়ির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালিতে। বাড়িটি পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রতিদিন অসংখ্য পাখিপ্রেমি মানুষ পাখি দেখতে ছুটে আসেন মনোহর আলী মাস্টারের বাড়িতে। বিশেষ করে ছুটির দিনে পাখি প্রেমীরা একটু বেশি ভিড় করেন। হেমন্তকালে হাওর বুকে যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে দেয়। সেই দৃশ্য চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করে সূর্যাস্তের দৃশ্য।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available