বাজিতপুরে জমি নিয়ে দু'পরিবারের দ্বন্দ্ব চরমে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় স্থানীয়রা

বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজেগাঁও গ্রামে পাশু মিয়া ও জসিম উদ্দীনের পরিবারের মধ্যে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। পাশু মিয়ার দাবি জমিটি তার ক্রয়কৃত। অপরদিকে জসিম উদ্দীনের দাবি, এটা পৈতৃক সম্পত্তি। এ নিয়ে দু'পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকারে ধারণ করেছে।

সম্প্রতি জসীম উদ্দীনের পরিবার পাশু মিয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে ঘর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। আর এ অভিযোগের প্রতিবাদ জানাতে পাশু মিয়ার পরিবার তাদের বাড়ির উঠানে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

পাশু মিয়ার পরিবারের দাবি, মোট চারটি দলিলের মাধ্যমে একই দাগ থেকে ৩৩.৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন প্রতিপক্ষ জসিম উদ্দীনের বাবা ও দাদার কাছ থেকে। চারটি দলিলের মধ্যে সর্বশেষ দলিলটি করেছেন ১৯৯০ সালের ১৮ জুলাই।

১৯৯০ সালের পর থেকে জমিটি পাশু মিয়ার ভোগ দখলে ছিল। ২০১৪ সালের দিকে জমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় দুই পরিবারের মধ্যে। সেসময় পরিমাপ করে দেখা যায়, ক্রয়কৃত ৩৩.৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৫২৩ দাগে ২১.৭৫ শতাংশ ভূমি দখলে রয়েছে পাশু মিয়ার। সাফ কাওলা অনুযায়ী ১১.৭৫ শতাংশ ভূমি দখলের বাইরে থাকে ক্রেতা পাশু মিয়ার। বিক্রেতার ওয়ারিশান জসীম উদ্দীন ১১.৭৫ শতাংশ ভূমি ক্রেতা পাশু মিয়াকে বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো ফেরত আনার চেষ্টা করে। আর সেসময় দু' পরিবারের মধ্যে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি হামলা মামলার ঘটনা।

২০১৬ সালের দিকে জসীম উদ্দীনের পরিবার ২১.৭৫ শতাংশ ভূমির মধ্যেও জোরপূর্বক ছোট টিনের দু'চালা ঘর তুলে বসতি শুরু করে এমন অভিযোগও রয়েছে পাশু মিয়ার পরিবারের।

পাশু মিয়া ও তার পরিবার এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাদেরকে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। এমনকি থানায় অভিযোগ করলেও আওয়ামী লীগে দলীয় প্রভাবের কারণে মামলা রেকর্ড করতে পারেননি, এমনটিও দাবি পরিবারটির।

পাশু মিয়ার পরিবার আরও দাবি করে, জসীম উদ্দীন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতাদের প্রভাবে দীর্ঘ বছর ধরে তাদের ক্রয়কৃত ভূমি দখলে রাখার চেষ্টা করছে। ক্রয়কৃত ভূমি দখলে নিতে পাশু মিয়ার পরিবারকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি, দিতে হচ্ছে চরম মূল্য।

পাশু মিয়ার পরিবারের দাবি, ক্রয় করার পর দখলে নিয়ে জমিটিতে চাষবাস করলেও পরে প্রভাব দেখিয়ে দখলে নিয়ে নেয় জসীম উদ্দীনের পরিবার।

দু'পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে ৪০টিরও বেশি শালিস দরবার হয়। বর্তমানে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

পাশু মিয়ার পরিবারের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে থাকায় জসীম উদ্দীনের পরিবারের আট থেকে দশজন পুরুষের সাথে আইনি লড়াই ছাড়া স্থানীয় পেশি শক্তি দিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না, এমনটিই দাবি পরিবারটির।

সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ শালিসটি।

দু'পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ বছরের দ্বন্দ্ব সমাধানে ক্রয়কৃত ৩৩.৫০ শতাংশের জমির মধ্য শালিসে ৩১.৯৩ শতাংশ রায় হয়, এখন ২৮ শতাংশ বুঝিয়ে দেবে, পরবর্তী সময়ে বাকি অংশ ভূমি পাশু মিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব হয় গ্রাম্য শালিসে। এতে দু'পক্ষই শালিসের রায় মেনে নেওয়ার কথা বলে স্বাক্ষর করে। ২৮ শতাংশ ভূমি চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণের খুঁটিও দেয়া হয়। জসীম উদ্দীনের ঘর সড়িয়ে নিতে সপ্তাহ খানেক সময় বেঁধে দেন মাতব্বররা।

বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রম করে পনেরো দিন পার হয়ে গেলেও ভূমিটি খালি করে দেননি জসীম উদ্দীনের পরিবার।

১ জানুয়ারি সকালের দিকে ঘরসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় জসীম উদ্দীনের। জসীম উদ্দীনের পরিবারের দাবি, পাশু মিয়ার পরিবার ও তাদের লোকজন এ কাজটি করেছে।

তবে পাশু মিয়ার পরিবার ভাংচুরের ঘটনাটি অস্বীকার করে দাবি তুলেন, কে বা কারা ভাঙচুর করেছে তারা তা জানেন না। হয়তোবা নিজেরাই ভাঙচুরের নাটক সাজিয়ে সাধারণ মানুষের সিম্পেথি নেওয়ার চেষ্টা করছে জসীম উদ্দীনের পরিবার।

ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে জসীম উদ্দীন বাজিতপুর থানায় পাশু মিয়া ও তার পরিবারকে দায়ী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সাংবাদিকদের উপস্থিতির টের পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জসীম উদ্দীনের পরিবার। আর এ দৃশ্যগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

এ দিকে পাশু মিয়ার পরিবার পরেরদিন বিকেলে বাড়ির আঙিনায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তাদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও ছড়িয়েছে তাতে জসীম উদ্দীনের পরিবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের সম্মানহানির চেষ্টা করেছে।

দুই পরিবারের এই দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ চেয়ে প্রতিবেশীরা জানান, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতেও লিপ্ত হতে পারে সংশ্লিষ্টরা।