রংপুর ব্যুরো: জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে হয়রানিমূলক প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরাম। একই সাথে প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের নামে ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গণবিরোধী প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।
১২ জানুয়ারি রোববার দুপুরে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান বিক্ষুব্ধ বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা। সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা নগরীর খামার মোড় নেসকোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান ফটক বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ গ্রাহক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, মির্জা বাবর বাবলু, সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, লিখন চৌধুরি, মনির হোসেন মিন্টু প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার কেনার নামে ২৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সেই নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার এখন জনগণকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নেসকো নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করছে।
প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সারচার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার এক হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোনো টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি। প্রতি এক হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে? বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কীভাবে নির্ধারিত হবে- এসব নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ধোঁয়াশা মধ্যে গ্রাহককে রেখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিতর্কিত প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নামে জনগণের পকেট থেকে টাকা লোপাটের নতুন ফাঁদ পাতানো হয়েছে দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০ টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোনো কারণে লক হয়ে গেলে লক খোলার জন্য ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে। বিদ্যুতের ওভার লোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এখানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকলে রিচার্জ করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পগুলো মওসুমের শুরুতে কৃষকরা বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ফসল তুলে বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। বর্তমানে আর এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে সেই সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীকে পেশা হারিয়ে পথে বসতে হবে। এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে কোনো কারণে সার্ভার ডাউন হলে সার্ভারের আওতাধীন প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করে বক্তারা।
বিক্ষুব্ধ সাধারণ গ্রাহকেরা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার খেসারত জনগণকে এখনো দিতে হচ্ছে। সারা দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ সেটির পরিবর্তে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণশুনানি ব্যতীত নেসকো কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী বলছেন, গণশুনানি অচিরেই করা হবে। তা ছাড়া জেলার সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি কর্পোরেশনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের ভালো দিক রয়েছে, তবে অনেকে হয়ত ভালোভাবে বিষয়টি জানেন না, যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে, ৯ জানুয়ারি মহানগর নাগরিক কমিটি হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থরক্ষা কমিটি এবং সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক পৃথকভাবে মানববন্ধন করে।
গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সে সময়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গণশুনানির আশ্বাস দিলেও তা না করেই তড়িঘড়ি করে প্রিপেইড মিটার সংযোগ স্থাপন শুরু করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available