কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করেছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি হাউজিং আবাসিক প্রকল্পের ওই জমি জবর দখল করে রেখেছিলেন।
১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দখল করা জায়গায় তৈরি করা বেশ কিছু স্থাপনা। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জানায়, দখলমুক্ত করে জায়গা প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জায়গা দখল করে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে বড় ফটক নির্মাণ করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম। একই সঙ্গে গৃহায়ণের বিভিন্ন প্লট দখল করে সেখানে আইটি পার্ক, স্কুল ভবন, জেলা পরিষদের মিলনায়তন নির্মাণ কাজ করেন।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাড়ে ১৯ একর জায়গা রয়েছে। এসব জায়গা ২০১৮ সালের আগে লটারি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আড়াই কাঠা, তিন কাঠা ও পাঁচ কাঠার প্লট রয়েছে। সব মিলিয়ে ২১২টি প্লট রয়েছে প্রকল্পে। তবে ২০১৮ সালের দিকে জেলা প্রশাসন এসব জমি অধিগ্রহণের নামে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়। অন্যদিকে প্লট বরাদ্দ পেয়ে অনেকে তাঁদের জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। কিন্তু প্লটমালিকেরা তাঁদের জমি আর বুঝে পাননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে বিশাল আকারের শাহি মসজিদ, এক হাজার আসনের অত্যাধুনিক জেলা পরিষদের মিলনায়তন, আইটি পার্ক। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল ইসলামও দুই বিঘা জমি দখল করে নেন। রবিউল ওই জমিতে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে বড় ফটক নির্মাণ করেন। শাহি মসজিদের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। জেলা পরিষদের মিলনায়তনের ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আইটি পার্কের ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুলিশ-র্যাবের উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামের দখলে থাকা জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। প্রধান ফটকও ভেকু দিয়ে ভেঙে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর জেলা পরিষদের মিলনায়তনের সামনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী কার্যালয়ও ভাঙা হয়। আইটি পার্কে গিয়েও উচ্ছেদ চালানো হয়।
এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ।
প্লটমালিকদের সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েও প্লট বুঝে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। প্লট মালিকেরা আওয়ামী লীগ আমলে রায় পেলেও প্রভাবশালী নেতারা জায়গা জোর করে দখল করে রেখেছিলেন উন্নয়ন করার নামে। উল্টো মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন প্রভাবশালী নেতারা। ২০১৮ সালের দিকে ৬ জন প্লটমালিক তাঁদের জমি ফেরত পেতে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে রায় পেলেও হাজী রবিউল ইসলামের রাজনৈতিক পেশি শক্তির কাছে পরাজিত হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদলের পর ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সেই জমি নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এদিন তারা রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত দখলে থাকা জমি উদ্ধারের পাশাপাশি ওই জমিতে সরকারি অর্থে চলমান আইটি পার্কের নির্মাণ কাজ বন্ধ ও অবকাঠামো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী সাইফুল আলী জানান, তিনি বি ব্লকে ৯ নম্বর প্লট পেয়েছিলেন। পাঁচ কাঠা জমি বরাদ্দ পেয়ে রেজিস্ট্রি করেছিলেন। কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ওই সময় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন খাস দেখিয়ে এসব জমি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনিসহ ৬ জন প্লটমালিক উচ্চ আদালতে রিট করেন। এরপর তাঁরা রায় পান।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২০ একর জায়গা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা সেগুলো আজ দখলমুক্ত করছি। যারা রেজিস্ট্রি করেছিল নতুন করে ডিজাইন করে ১৭৩টি প্লট মালিকের মধ্যে বিভাজন করা হবে। আর মসজিদ ও অডিটরিয়াম বাদে সেখানে আর কোনো স্থাপনা রাখা হবে না।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available