টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার টেকনাফে অপহরণ যেন কোনো ভাবেই থামছে না। পুলিশ-র্যাবের যৌথ অভিযান বা এলাকাবাসীদের প্রতিবাদ কোন কিছুই কাজে আসছে না। স্থানীয় দুর্বৃত্ত ও রোহিঙ্গা সন্ত্রসীরা মিলে এলাকার লোকজনকে প্রতিনিয়ত অপহরণ করেই যাচ্ছে।
অপহৃরত ভিকটিমদের অনেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হলেও সিংহভাগ এসেছে মুক্তিপণ দিয়ে। আর তাই অপহরণ বন্ধে পাহাড়ে অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় জনগণ।
১৫ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ার দক্ষিণ বড় ডেইল এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মানববন্ধনে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোকজন ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, টেকনাফের বাহার ছড়ার মানুষ আমরা শান্তিতে নেই। পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে আমাদের পদে পদে ভয়ে থাকতে হয়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসার পর হতে অপহরণ বেড়েছে। গহীন পাহাড়ে আস্তানা তৈরি করে মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে তারা। অসহায় পরিবারের ছেলেরা মুক্তিপণ দিতে না পারায় তাদের জীবন দিতে হয়েছে সে রকম নজিরও আছে।
সাম্প্রতিককালে একজনের অপহরণের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বক্তারা বলেন, ১ সপ্তাহ আগে বড় ডেইল এলাকার জসিমকে দোকান থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নির্যাতন চালায়। পরে জীবন রক্ষায় ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। শুধু তা নয়, একই এলাকার দিন মজুর মোহাম্মদ ইউনুছের ছেলে ইসহাককে নিয়ে গিয়ে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন।
এভাবে যদি একের পর এক স্থানীয় লোকদের অপহরণ করে নিয় যায়। তাহলে আমাদের এ দেশে বসবাস করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছি বলে মনে হচ্ছে। আমরা এ অপহরণ বন্ধে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানের জোর দাবি করছি।
অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে ফিরে আসা দুই ভিকটিম জসিম উদ্দীন (৫০) ও ইসহাক (১২) জানান, আমাদের নির্যাতনের কথা বললে, চলার সাহস হারিয়ে ফেলি। মুখে অস্ত্র ডুকিয়ে দিয়ে, কিরিচ গলায় লাগিয়ে, সিগারেটের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পুড়িয়ে, বড় বড় অস্ত্রের নল দিয়ে মেরে মেরে নির্যাতন করেছে। যা বলার ভাষা নেই। সেগুলো মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে পরিবারে সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন মুক্তিপনের জন্য। পরে কোন উপায় না পেয়ে জীবন রক্ষায় নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে ও এলাকায় ভিক্ষা করে মুক্তিপন দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি । আমাদের বিশ্বাস সেনাবাহিনী যদি পাহাড়ে অভিযান করে অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব।
স্থানীয় মেম্বার ফরিদ উল্লাহ বলেন, আমাদের এলাকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য যদি সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী বা যৌথ বাহিনী পাহাড়ে অপহরণকারীদের আস্তানায় অভিযান না করে তাহলে আমরা প্রয়োজন সড়ক অবরোধ করব।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাহার ছড়া ইউনিয়ন দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি সৈয়দ হোসাইন মেম্বার, ৮নং নুরুল ইসলাম মেম্বার, ৭নং ওয়ার্ডের ফরিদ উল্লাহ মেম্বার, দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আহমদ, যুবদলের আহবায়ক মুজিবুর রহমান, সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ হোছন, নুরুল আলম, মওলানা নেজাম উদ্দীন, অ্যাড. মুশাররফ হোসাইন, নেওয়াজ শরিফসহ ছাত্র, যুবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি গিয়াস উদ্দিন জানান, অপহরণ বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ভিকটিমকে উদ্ধারপূর্বক অপহরণকারীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available