এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: পথের দু’পাশে কাঁচ-পাকা ধানের ক্ষেত। মাঠজুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। এমন অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝেই জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় দেখা মিলবে বাহারি রঙের তরমুজের।
উপজেলার আত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা, লক্ষীচাপর, মাত্রাই তালুকদার পাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় চাষ হয়েছে এসব তরমুজ। বিকেল হলেই দেখা যায়, কৃষক ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে এনে রাস্তার পাশে জড়ো করে রাখছেন। পথচারীরা সে তরমুজ কিনছেন দরদাম করে। আসছে ইঞ্জিলচালিত ভটভটি ও কাভার্ডভ্যান, যেগুলো ভর্তি করে তরমুজ পাঠানো হচ্ছে ঢাকাসহ সারাদেশে। হলুদ, লাল এবং সবুজ রঙের এসব তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু।
কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন তরমুজ চাষীর সাথে। তারা বলেন, বছরে ৯ মাসই এখানে মাচায় তরমুজ চাষ করা যায়। তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই এর চাষ বাড়ছে। এ বছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও সন্তুষ্ট।
গত ২ বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন বিয়ালা গ্রামের চাষী ফরহাদ হোসেন। এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। এই কৃষক বলেন, এবার মধুমালা, সুগারকিং, ইউনিভার্ট ও টাইগার ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। এ তরমুজ বছরে ৯ মাস চাষ করা যায়। বাকি শীত মৌসুমে ৩ মাস আমরা আলু চাষ করি। ধান এবং আলু চাষ আমাদের কালাইয়ের ঐতিহ্য হলেও ইদানিং তরমুজ চাষে কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে। অসময়েও ভালো টাকা আয় হয় বলে অনেকেই আমার মত তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছে।
তরমুজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কথা হয় লক্ষীচাপর গ্রামের চাষী ফেরদৌস হোসেনের সাথে । তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে জৈব সার, কীটনাশক, ইউরিয়া, ফসফেট, ডিএপি, পটাশসহ যাবতীয় সার দিতে হয়। তরমুজের চারা রোপণের জন্য কিছুদূর পরপর বেড তৈরি করে নিতে হয়। এই বেড পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর নির্দিষ্ট দূরত্বে ফুটো করে বীজ রোপণ করতে হয়। চারা গজালে বাঁশ ও সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে জমির চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হয়। মাচায় চারা ওঠার জন্য ছোট-ছোট বাঁশের খুঁটি পুতে দিতে হয় মাচার সাথে। এমন কাজে প্রতি বিঘায় শ্রমিক মজুরিসহ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তরমুজের বীজ ভালো মানের হলে তরমুজের ফলনও ভালো হয় এবং বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়।
আরেক তরমুজ চাষী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জমিতে একবার তরমুজ লাগালে ৩ মাস ধরে বিক্রি করা যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও ভালো পাওয়া যায়। এটি একটি লাভজনক ফসল।
ইউটিউব দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রথমবারের মত হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন ইউনিয়নের লক্ষীচাপর গ্রামের কৃষক শুয়াইব হোসেন। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এই হলুদ তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন তিনি। এ বছর তার তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচে ৩ বিঘা জমিতে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৪৫০ মণ হলুদ তরমুজ। বাজার দর ভালো থাকলে দেড় লক্ষ টাকা বিক্রির আশা করছেন শুয়াইব। তিনি বলেন, এবার আকারভেদে ১২শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা মণ দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। মাত্র ৩ মাস সঠিকভাবে পরিচর্যা করে ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। তাই তিনি মনে করেন লাভজনক ফসল তরমুজ চাষ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
আব্দুল কুদ্দুস হোসেন নামে আরেকজন চাষী বলেন, আমাদের তরমুজ দেখতে আকর্ষণীয় এবং স্বাদে খুবই মিষ্টি। শুনেছি হলুদ তরমুজে ভিটামিন-এ ও সি রয়েছে। এই কৃষক আরও বলেন, উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছি। তরমুজ চাষে এ বছর ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও আশা করছি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। আল্লাহ সহায় হলে আগামী বছর আরও বেশি তরমুজ চাষ করব। তরমুজ চাষের মাধ্যমে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি, আশা করি আমাকে দেখে অন্যরাও তরমুজ চাষে এগিয়ে আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এবারে ৪ হেক্টর জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন চাষীরা। অসময়ের এই তরমুজ চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। এ উপজেলায় এবার ব্ল্যাক বেবি, মধুমালা, গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো কিংসহ কয়েক জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। একই সময়ে একই জমিতে ২ থেকে ৩ বার তরমুজ চাষ করা যায় বলে মৌসুমের পরেও ভালো বিক্রি হয় । মালচিং পেপার ব্যবহার করে মাচার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই পদ্ধতি এলাকার কৃষকদের মাঝে দারুণ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
আগামীতে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ বাড়াতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available