কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: ‘সাড়া বাড়িতে স্প্রে ( চেতনানাশক) করেছিল ডাকাতরা। সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম। সেই সুযোগে ডাকাতরা ঘরের টাকা, সোনা নিয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যা লাগলেই চিন্তায় গাঁ হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সকাল সকাল শুয়ে পড়ি। জানের মায়াতো সগলেরই আছে।’
চোখে মুখে হতাশার আর আতঙ্কের ছাপ রেখে ১৯ জানুয়ারি রোববার বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন লতিকা রাণী বিশ্বাস (৫৫)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ঘোষপাড়া এলাকার বিমল ঘোষের স্ত্রী। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে তাদের বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে প্রায় এক লাখ নগদ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন।
লতিকা রাণীর ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর পুলিশের তৎপরতা নেই। সেজন্য এলাকায় প্রায়ই চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি রাতে একই এলাকার বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম রিপনের বাড়িতে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল ৮/১০ জনের একদল ডাকাত। তাদের উপস্থিতি স্থানীয়রা টের পেলে তারা দ্রুত চলে যায়। রিপন কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
রিপনের ছেলে তানভির আহমেদ বলেন, জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিলাম। সেসময় বাড়ির ভিতর থেকে জানালায় শব্দ হচ্ছিল। সে সময় জানালার কাছে আসলে একজন ডাকাত বাইরে থেকে হাত পারে ধরে। উঠানে আরো ৮/৯ জন ছিল। তাদের হাতে পিস্তল, চাইনিস কুড়াল ছিল। তখন রাত ২টা বাজে। ডাকাতরা প্রায় এক ঘণ্টা হাত চেপে ধরে রাখে। অনেক চেষ্টার পর হাত ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েকজনকে ফোন দিলে সবাই বাড়িতে আলো জ্বালায়। তারপরে ডাকাতরা গেট খুলে চলে যায়।
কয়া স্কুলপাড়া আব্দুল মজিদের স্ত্রী রাফেজা খাতুন বলেন, ২৭ ডিসেম্বর আমার বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রহাতে ৪/৫ জন ডাকাত ঢুকেছিল। তারা প্রথমে বড় ছেলেকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। পরে সবাইকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা এবং সাত থেকে আট ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
লতিকা রাণীর ছেলে কাজল ঘোষ বলেন, ডাকাতদের স্প্রের কারণে বাড়ির সকলেই অচেতন হয়েছিল। ঘটনার পরদিন কেউ হাসপাতালে কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনও সবার ঝিমধরা কাটেনি।
এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্টের পরে পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে। সেজন্য প্রায়ই এলাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সেজন্য নিজের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে প্রতি রাতে ১৬ জন করে পাহাড়া দিচ্ছেন তাঁরা। সবাই সতর্ক করতে পাহাড়ার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা একদম ভেঙে পড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা আরো জোড়দার করা হবে। অপরাধ নির্মূলে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন ওসি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available