মো. তৌহিদুর রহমান তুহিন, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: প্রাকৃতিকভাবে সহনশীল, অল্প খরচ, রোগবালাই কম এবং অধিক ফলনের কারণে রবি মৌসুমে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ভুট্টার চাষ বেশি হয়ে থাকে। এখানকার জমিও উর্বর পলিময়। ফলে প্রতিবছরই বাম্পার ফলন হয় ভুট্টার। এবারও হয়েছে। তারপরও শঙ্কিত কৃষকরা। ভয় ভুট্টার ন্যায্য মূল্য না পাবার।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদনে ফলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭০ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্র অতিক্রম করবে- এমনটাই ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।
কৃষকরা জানান, ফুলছড়িতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফড়িয়া, দালাল আর মহাজনদের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের দাবি, সরকারিভাবে ভুট্টার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ভুট্টা কেনা হোক।
তারা আরও জানান, জমি থেকে ভুট্টা তুলতে শ্রমিকদের খরচ বহন করতে এবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় স্থানীয় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে ভুট্টা বিক্রয় করতে হয়। ফলে কৃষকের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্ব ভোগী ভুট্টা ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের হারোডাংগা গ্রামের ভুট্টা চাষি মিলন মিয়া বলেন, আমি সাত বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টার গাছ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো। তবে বাজারের যে অবস্থা ভুট্টার দর নিয়ে চিন্তায় আছি।
উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য উড়িয়া গ্রামের ভুট্টা চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভাল ফলনো হয়েছে কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য মোতাবেক দর থাকলে উৎপাদন খরচ তোলাই মুশকিল হয়ে যাবে। গত দুই সপ্তাহে ১০ মণ ভুট্টা বিক্রি করেছি ১৩০০ টাকা দরে। বর্তমানে সেই ভুট্টার দর কমে ৮০০ হতে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ব্যবধানে মণ প্রতি দাম কমেছে ৪০০ হতে ৪৫০ টাকা। এভাবে দর কমতে থাকলে, ভালো ফলন হয়েও খরচের টাকা উঠবে না।
এরেন্ডাবাড়ির ভুট্টা চাষী হাসেম তরফদার সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। এ অবস্থায় পরিবহন সমস্যার সমাধানসহ সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করে দিলে চাষিরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হবেন বলে অভিমত কৃষকদের।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মিন্টু মিয়া বলেন, সিন্ডিকেট ভুট্টার দাম কমিয়ে দেয়। যার ফলে কৃষক ভাইয়েরা ভুট্টার দাম পায় না। পরবর্তীতে আবার দেখা যায়, যখন কৃষকদের কাছে কোন ভুট্টা থাকে না, আড়ৎদারের হাতে যখন ভুট্টা চলে যায়, তখন ভুট্টার দাম বেড়ে যায়। কৃষকদের কাছ থেকে ভুট্টা কেনা গেলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম পেত এবং ভুট্টা চাষেরও সম্প্রসারণ ঘটতো। চলতি বছর জেলায় ৫৮৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ভুট্টার। এ থেকে ৭০ হাজার ৬৮০ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available