কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার পৌরসভায় তিন কর্মকর্তা মিলেমিশে কোটি কোটি টাকা অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বাবুর নেতৃত্বে একটি টিম কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনার পর গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য দেন তিনি।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার তিন কর্মকর্তা পৌর নির্বাহী রাসেল চৌধুরি, নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল কক্সবাজার পৌরসভা।
এই সিন্ডিকেটটি সর্বত্র ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে বানিয়ে কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিলো। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তাদের মর্জি মতেই চলছিলো সব কাজ কাম। শুধু তা-ই নয় দীর্ঘদিন ধরে বর্মরত এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উঠে, এই তিন কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে ভুয়া প্রকল্প বিল ভাউচার, মাস্টাররোল বানিয়ে প্রকল্প তৈরি, মাস্টাররোলে কর্মচারী দেখানোসহ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্য, দৈনিক রাজস্ব আয় থেকে টাকা গায়েবসহ অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে দৌড়ের উপর রাখাসহ প্রতিষ্ঠানতে জিম্মি করে রাখার অভিযোগও ছিল রীতিমতো।
শুধু তা-ই নয়, সাবেক মেয়রদের ভুয়া বিল পাস করে, বেনামি মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগ করে ও পেছনের তারিখ দিয়ে সাবেক মেয়রের চেক স্বাক্ষর করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এরা। তাদের লাগামহীন এই অনিয়ম-দুর্নীতির দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ছিল ভুক্তভোগীদের। পরে এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সর্বশেষ আজ কক্সবাজার পৌরসভায় অভিযান চালায় দুদকের একটি টিম।
কক্সবাজার পৌরসভা থেকে অবসরে যাওয়ার পরও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তা রনজিৎ দে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পাননি। তিনি জানান, জীবন-যৌবন শেষ করেছি পৌরসভায় চাকরি করে। আমাদের কোন পেনশন নেই, চাকরির বেতন থেকে কেটে রাখা টাকা এবং পৌরসভা থেকে দেওয়া একটি অংশের টাকার জন্য তিন বছর ধরে ঘুরছি। আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না। মূলত পৌরসভায় তিন জনের সিন্ডিকেট সব কিছু লুটপাট করছে। ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতির নেতারা বলেন, এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন হয়নি। অথচ এক সপ্তাহ আগে ঠিকাদারের ৪ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কারণ ঠিকাদারের বিল দিলে তিন জনের সিন্ডিকেটে কমিশন বাণিজ্য থাকে। ইতিমধ্যে পৌরসভায় সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আন্দোলনের যাওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছে। আর সহ্য হচ্ছে না তাদের অত্যাচার। ৮ বছর ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি ফান্ডের কোন টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি।
ঠিকানার নজরুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম মূলত সাবেক মেয়রদের ক্ষমতাকে পুঁজি করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তারই অংশ হিসাবে বর্তমানে ৬ মাস বা ১ বছর এমনকি ২ বছর আগে করা কাজের বিল দিচ্ছে তাও পুরাতন মেয়রের স্বাক্ষরে। পুরাতন কাজগুলোর কোন হদিস না থাকলেও তাঁরা কাগজ কলমে ঠিক করে বিল তুলে নিজের কমিশনসহ বেশির ভাগ টাকা আত্মসাৎ করছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, পৌরসভার অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিষ্ঠানটির রন্ধ্রে বস্ত্রে দুর্নীতি-অনয়িম। এমনকি দৈনিক বিভিন্ন ফরম, সনদ, লাইসেন্স এ থেকে আয় হওয়া টাকা পৌরসভার অ্যাকাউন্টে জমা না কয়ে তিন কর্মকর্তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। সচিব রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ থাকার পরও কীভাবে তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন সেটাই প্রশ্ন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরি বলেন, নিয়ম মেনে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। পৌরসভার আয়ের উপর বেতন ভাতাসহ অন্যান্য কিছু নির্ভর করে থাকে। কমিশন বাণিজ্য বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঘুষ হিসাবে নয়, কেউ খুশি মনে কিছু দিলে নিয়ে থাকি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব রাসেল চৌধুরি সব সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিত। দলীয় নেয়ার মত কাজ করেছে। তাদের রেখে কোনো ভাবেই পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আসুন আমরা পৌরবাসী ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিন্ডিকেট ভেঙে ওদের কক্সবাজার থেকে বিতাড়িত করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available