ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: মাঘের শেষ দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করবে। তখন মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হবে প্রকৃতি। তাই ভালো ফলনের আশায় এবং মুকুল ভালো হওয়ার জন্য আগাম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র থেকে জানা যায়, এই বছর জেলা জুড়ে ৩৭ হাজার ৫শত ৪ হেক্টর বাগানে আমের ফলন হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ১শত ৮০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ১শত হেক্টর, গোমস্তাপুরে ৪ হাজার ২শত ৪০ হেক্টর, নাচোলে ৪ হাজার ৩শত ৫০ হেক্টর এবং ভোলাহাটে ৩ হাজার ৬শত ৩৪ হেক্টর বাগানে আমের ফলন হচ্ছে।
সরজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য আম গাছে আগাম পরিচর্যা হিসেবে বিষ ও কীটনাশক ব্যবহার করছে আম চাষীরা। এছাড়া চাষীরা আশা করছে এই বছর আমের ফলন ভালো হবে এবং ন্যায্য দামও পাবে তারা।
জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগাম, লিফলেট বিতরণ, মাঠ দিবস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আম চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে তারা। এই বছর আমের ফলন ভালো হবে বলেও আশা জেলা কৃষি অফিসের।
শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের আব্বাসবাজার এলাকার আমচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আমি একজন আম ব্যবসায়ী। সামনে আমের ভালো ফলনের জন্য আমরা এখন আম গাছের পরিচর্যা নিচ্ছি এবং আগামীতে আমের মুকুল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য আমের মুকুল সতেজ রাখার জন্য কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছি।
তিনি আরোও বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাদের বলেছে আমের ফলন ভালো পেতে হলে আমের গাছে কোনো মহা লাগতে দেওয়া যাবে না। এজন্য মহার জন্য কোম্পানি একটি ঔষধ দিচ্ছে এবং আমরা সেই ওষুধটি ব্যবহার করছি। কৃষি অফিসের পরামর্শেই আমরা কাজ করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের আম চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমের মুকুল এখন দেখা দিতে লেগেছে। আমরা এখন ভালো ফলনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করছি ও গাছে বিষ দিচ্ছি। এবছর আশা করছি আল্লাহ চাইলে আমের ফলন ভালো হতে পারে।
আমের বাগানে কাজ করা বাগান মালীক আলী হোসেন বলেন, এখন মহা-কাটার জন্য আমরা বিষ ব্যবহার করছি। সালফা, মেনকোজ ও তরল বিষ একসাথে মিশিয়ে আমরা গাছে দিচ্ছি। এতে আমের মুকুল ভালো ফুটবে এবং মুকুল পরিষ্কার থাকবে। এছাড়া আমি প্রতিদিন ৫০০ টাকা বেতন পায় এবং একমাস মতো বাগানে কাজ করতে পারবো।
ভোলাহাট উপজেলার দুরুল আলী বলেন, গাছে বিষ দিচ্ছি আমের ফলন হওয়ার জন্য। আশা করছি, ভালো যেন ফলন হয় এবং গতবারের চেয়ে এবার মুকুল ভালো হবে ও লাভবানও হবো।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মুখলেসুর রহমান বলেন, এই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মুকুল খুব বেশি হবে বলে আমরা আশা করছি। শীতের তীব্রতা কম হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে মুকুল বের হওয়া শুরু হয়ে গেছে। তাই এই মুহূর্তে জরুরি যে কাজগুলো করতে হবে তার মধ্যে গাছে যদি কোন পরগাছা থাকে তাহলে তা কেটে ফেলতে হবে এবং যেহেতু মুকুল বের হয়ে গেছে তাই সেচ দেওয়া যেতে পারে। সেচের পাশাপাশি স্প্রে করতে হবে। আর স্প্রে করার সময় সাইফোমেট্রিক গ্রুপের সালফার ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। এইসময় গাছে মহা লাগার বিষয়টি থাকে তাই একটি ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক স্প্রে করা খুবই জরুরি।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি এই বছর মুকুল অনেক হবে। মুকুল আশার পর যদি প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না আসে তাহলে এবার নিঃসন্দেহে ফলন অনেক বেশি হবে। আর মুকুল সম্পূর্ণ বের হওয়ার পরে আমরা বলতে পারবো কী পরিমাণে ফলন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হয়। এখানে আমের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এই সময় আমের যে পরিচর্যাগুলো আছে সেইগুলো মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগামের মাধ্যমে, লিফলেট বিতরণ, মাঠ দিবস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকছি। তার মধ্যে যে গাছগুলোতে এখনো মুকুল আসেনি এবং যে গাছগুলোতে মুকুল আসছে কিন্তু ফুল ফুটেনি সেই গাছগুলোতে একটি ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক অর্থাৎ ম্যাগোজাত গ্রুপের যেকোনো ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম করে এবং কীটনাশক একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া ফুল সম্পূর্ণরূপে ফুটে যাওয়ার নিয়মিতভাবে পানি সেচ দিতে হবে এবং যখন আমের আকারটা মারবেলের মতো হবে তখন আবার ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে দিতে হবে, শুধু গ্রুপগুলো চেঞ্জ করতে হবে। প্রতিবছর আমরা এই ধরনের ব্যবস্থাপনা কৃষক ভাইদের বলে থাকি এবং এবারো সেটি অব্যাহত আছে যাতে রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। আর সুন্দরভাবে আম উৎপাদন মৌসুমটা পার করতে পারি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available