ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার ধামরাইয়ে মাজারের ৬৬তম ওরশ চলাকালে প্রথমে সেটির কার্যক্রম বন্ধ ও পরবর্তীতে সেটি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামে প্রয়াত শুকুর আলী শাহ ফকিরের (রহ:) মাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুকুর আলীর দুই ছেলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাংচুরের ঘটনায় ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ধামরাই ইমাম পরিষদের নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল মাজারটিতে ৬৬তম ওরশ আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউলগান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের দিকে ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতৃত্বে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরের পার্শ্ববর্তী অর্জুন নালাই জামে মসজিদে জড়ো হন। তারা ওরশ ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি জানান। রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে মুসল্লিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ওরশ সংশ্লিষ্টদের ওরশের আয়োজন বন্ধের কথা জানালে তারা ওরশ বন্ধ করেন। তবে এর পর মুসল্লিরা ওরশের আয়োজকদের গ্রেফতার ও মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ তাতে সায় দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
আরও জানা যায়, এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ইমামরা এই মাজার চিরতরে বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন জানিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। এর পরপর রাত ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত অন্য ৫০-৬০ জন মুসল্লি দল বেধে মাজারটিতে ঢুকে মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সেখানে থাকা দুটি কবরসহ বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাঙচুর ও অপর একটি ঘরের বেড়ার টিন ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাজার সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে বাড়িটি ত্যাগ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জড়ো হন। এরপর তারা মাজারে গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। স্থানীয় বেশ কিছু লোকও ছিল সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ওই মাজারে সেজদা দেয়া, মান্নত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না বলে স্লোগান দেয়। রাত ১০ টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি গিয়ে মাজার ভেঙে ফেলেন।
প্রয়াত শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, মাজারে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালাতাম। বহুবছর ধইরা ওরশ হয়। গতকাল মুসল্লিরা নিষেধ করছিলো ওরশ করতে আমরা বন্ধ করছিলাম। এরপর রাতেই ৫০-৬০ লোক আইসা মাজার, ঘর ভেঙে দিছে। ওরা আমারে মারতে চাইলে মারুক। ভয়ে পোলারা বউ পোলাপান নিয়া চলে গেছে। পুলিশ আসছিলো কইছে মামলা করতে আমরা মামলা করলে মামলা চালামু কেমনে।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে ওই বাড়িতে মাদক ব্যবসাসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে গতকাল ধামরাই উপজেলা ইমাম পরিষদ ও আমাদের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ ওই বাড়ির পাশেই একটি মসজিদে জড়ো হই। আমাদের মূল লক্ষ ছিল গান বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধ করা হয়েছে জানায় তখন আমরা এশার নামাজ শেষে চলে আসি। এরপর শুনেছি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙে ফেলেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান ভাঙচুর নয়।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available