এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকে তাকাই মাঠভরা সোনালী ধানে ভরপুর জমিগুলো। বাংলার চিরায়ত অপরূপ দৃশ্য যেন ছবির মত ফুটে উঠেছে। মাঠ জুড়ে ধানের দোল খেলানোর দৃশ্য দেখে খুশিতে আত্মহারা কৃষাণ-কৃষাণীরা।
কালাইয়ের অধিকাংশ ক্ষেতের বোরো ধান এখন উপজেলার মাঠে মাঠে সবুজ রঙে ভরে উঠেছে। উপজেলার প্রতিটি বোরো ধানের ফসলের মাঠে যেদিকেই চোখ যাবে সেদিকেই কেবল সবুজ সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে । এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কৃষকরা বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন। রোদ আর বাতাসে ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।
আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শুরু হলেও প্রায় জমির ধান ক্ষেত এখনও সবুজে সমারোহ। এই সবুজ ধান ক্ষেতেই কিছু দিন পর সোনালী রঙ ধারণ করবে। এরপর শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই করা। আগামী মে মাসের শেষের দিকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্ক মাথায় নিয়ে স্বপ্নের ফসল বোরো ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন কালাইয়ের কৃষকরা। নতুন ধান ঘরে আসার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ভোরের আলো ফুটতেই তারা কোমর বেঁধে ভাল ফলন পাওয়ার আশায় জমির ধান পরিচর্যায় মাঠে নেমে পড়েন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা হলো অন্যতম। পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। গত বছর বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। চলতি বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। গত বছর ধানের মূল্য বেশি পাওয়ায় এ বছর কৃষক তাদের সবজি ফসল লাগানো জমিতেও ধান লাগান। ফলে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
এ বছর চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল তাই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ ফসলের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান রয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর। এতে প্রায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৭ শত ৫৭ মেট্রিক টন । এ বছর বিনামূল্যে প্রণোদনা হিসেবে ৫ হাজার ৩শ জন কৃষকদের মাঝে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ, কীটনাশক ঔষুধ ও সার দেওয়া হয়েছে।
উৎপাদন বিবেচনায় উপজেলায় আলুর পরে ধানকে প্রধান ফসল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে মাড়াই শুরু হবে মে মাসের শেষের দিকে। দীর্ঘ খরার ফলে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা অনুযায়ী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্ক মাথায় নিয়ে অনেক কষ্টে ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে কৃষকরা।
উদয়পুর ইউনিয়নের জমিনপুর গ্রামের স্বপন ও বাশিলাপাড়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি পোকামাকড়ের উপদ্রব কম রয়েছে। সময়মত সঠিক মাত্রায় সেচ দিতে পারায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশা রয়েছে। ধান কাটার সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নিরাপদে ধান ঘরে তোলতে পারবো। ধানের বাজার দাম ভালো পেলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে ।
মাত্রাই ইউনিয়নের ইন্দাহার গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ৪ একর জমিতে উপশী ও হাইব্রিড জাতের ধান লাগিয়েছি। কীটনাশক, সার ও বীজ অন্যান্য দ্রবাদির যা দাম, এতে করে যদি ধানের বাজার ভাল না হয় তাহলে কৃষকেরা কৃষি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাতিয়র গ্রামের কৃষক শাহীন মন্ডল জানান, আমি ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। যাতে করে কৃষক যেন ধানের ন্যায্য মূল্য পান সেদিকে সরকারকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।
কালাই পৌরসভা মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক আ. জলিল উদ্দিন জানান, এবার ১ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছি। ফসলের অবস্থা দেখে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে এবং বাজারে ভালো দাম পেলে এবার লাভের মুখ দেখবো বলে আশা করছি।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম রয়েছে। ফসলের মাঠে কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা ও সময় মতো সার-কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে আগামী মে মাসের শেষ দিকে। স্বপ্ন বোনা সোনালী ফসল বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available