নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নে প্রায় ৩ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানহীন উপকরণ ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব ও গুণগত মান চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, নাউতারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অফিস থেকে মতির বাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ১১০ টাকা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নত মানের ভিটি বালু, শক্তিশালী খোয়া এবং টেকসই নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার কথা থাকলেও বাস্তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস হোসাইন এবং তার সাব-ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম দুলাল নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে লুটপাট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাবে এবং দুই-এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ছাইফুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘যে মানের কাজ হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে দুই-এক বছরের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে যাবে। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’
সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মো. রেজাউল করিম (৩৮) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রকল্পের বাজেট কোটি টাকার ওপরে, অথচ রাস্তার কাজে এত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে যে, কয়েক মাসের মধ্যেই এটি নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা চাই, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
নির্মাণকাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাব-ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম দুলাল উল্টো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এবং প্রতিবেদককে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে শতভাগ কাজ হচ্ছে। কারও তো কোনো মাথাব্যথা নেই, তুমি কেন এত মাথাব্যথা দেখাচ্ছো? তুমি কি চাও আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হোক? একটু উনিশ-বিশ হবে! তুমি কি আমার সাথে সংঘাত চাও, নাকি সমঝোতা?’
তিনি আরও বলেন, ‘তুমি ছোট ভাই, কাজটায় ডিস্টার্ব দিও না! খোয়া যথেষ্ট ভালো দিয়েছি। তবে যেটা দিয়ে ফেলেছি, সেটা তো ফেরত নেওয়া সম্ভব না! আমাকে কথা দাও, নিউজ করবে না! যদি নিউজ করো, তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস হোসাইনের সত্বাধিকারীর মুঠোফোনে কল দিলে সাব-ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম দুলাল ফোন রিসিভ করেন। তিনি আবারও প্রতিবেদকের নিউজ না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দুলাল, আমি ঠিকাদার। আমি কয়টা লোকের সাথে বসবো আর কয়জনকে ম্যানেজ করবো? তুমি ছোট ভাই হও, কাজটায় ডিস্টার্ব দিও না। খোয়া কিন্তু যথেষ্ট ভালো কোয়ালিটির দিয়েছি। আমি তোমাকে কথা দিলাম, ভালো মানের মালামাল ব্যবহার করবো। তবে যেটা নিয়ে ফেলছি, সেটা তো আর কেউ ফেরৎ নিবে না। আমাকে প্রমিজ করো নিউজ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘খোয়ার সমস্যা হলে খোয়া টেস্ট হবে। নিউজ করলে কিন্তু তোমার সাথে আমার কেওয়াজ (দ্বন্দ্ব) হবে।’
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. জিকরুল আমিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, ‘ওখানে যখন ইট ফেলছে তখনই আমার লোক বলছে, ইট খারাপ আছে। ঠিকাদারকে ইট পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available