মাসুম লুমেন: প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে গাইবান্ধার ইতিহাস খ্যাত মীরের বাগানের ঐতিহ্যবাহি ইচ্ছা বা মানত পূরণের মেলা। মেলা চলবে বৈশাখের শেষ দিন পর্যন্ত। মেলার প্রথম দিন থেকেই নিজ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ ইচ্ছা পূরণের আশায় ভিড় জমান এ মেলা প্রাঙ্গণে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত মীরের বাগানে তিন অলির মাজার প্রাঙ্গণে মানত বা ইচ্ছা পূরণের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত নারী-পুরুষের পদচারনায় সরগরম চারিদিক। মনের ইচ্ছা পূরণ করতে মাজারে শিরনি দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত ভক্তরা। কেউ অস্থায়ী উনুনে আগুন জ্বালছেন, কেউবা মানতের খিচুড়ি রাধছেন, আবার কেউ করছেন মাজার জিয়ারত। তাদের বিশ্বাস, এতে অসুখ-বিসুখ কিংবা যে কোনও ধরণের ‘বালামুসিবত’ দূর হবে। বিশেষ করে সন্তানধারণে অক্ষম মহিলারা এখানে মানত করলে তারা সন্তান ধারণে সক্ষম হবেন। এছাড়া সারা বছরের পঙ্কিলতা দূর হয়ে সামনের দিনগুলোতে জীবন হবে সুখের ও সংসার-কর্মে আসবে সাফল্য।
মীরের বাগানের ঐতিহাসিক পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহ এর মাজার। মসজিদের সামনে এবং দু’পাশের ৩.৯৫ একরের খোলা প্রান্তর জুড়ে বসে এ মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এলাকায় চারু, কারুপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরণের মিষ্টি, মুড়ি, জিলাপির দোকান।
মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলে বিশেষ খিচুরী রান্না। মানত বা ইচ্ছা পূরণের আশায় দূর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত ভক্ত নারী-পুরুষ এখানে এসে মাজার জিয়ারত করেন এবং সেখানেই খিচুরী রান্না করে। সেই রান্না করা খিচুরি মাজার কর্তৃপক্ষ এবং দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করে এবং নিজেরা খান। তবারুহ হিসেবে অনেকেই তা বাড়িতেও নিয়ে যান। এখানে খিচুরী রান্নার বিশেষ বৈশিষ্ট হলো- ভক্তরা বাড়ি থেকে চাল-ডাল, মুরগী, জ্বালানী কাঠসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসেন মাজারে। মাজারের নির্দিষ্ট স্থানে মুরগী জবাই করে মাজারের সামনেই চুলা তৈরি করে রান্না করা হয় মুরগীর মাংসের খিচুরী।
মাজারে আসা ভক্তরা জানান, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি, সন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা ও সংকট নিরসনে মানত পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তারা এখানে আসেন। অনেকেই আবার শুধু দেখতে এবং ঘুরতে এসেছেন এখানে। তবে মাজারে মৃত ব্যক্তির কাছে থেকে কোনও কিছুর আশা করাটা ইসলামে হালাল না বরং হারাম, এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি মাজারে আসা কেউই।
সংস্কারকালে মসজিদের ভেতরে একটি কালোপাথর পাওয়া গিয়েছিল। তাতে ‘১০১১ই সাই’ উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের কোনও এক সময় তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও এই কালোপাথরটির আর পাওয়া যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available