বুলবুল আহমেদ, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশীয় মাছের রেনুর হ্যাচারি করে ভাগ্য বদলে গেছে পিয়াল হোসেন নামে এক যুবকের। এখন তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় যুবকদের রোল মডেল। মৎস্য চাষের রেণু উৎপাদনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যেই পেয়েছেন পুরস্কার। খামারের প্রচার ও প্রসারের জন্য সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
সংসারে অভাবের তাড়নায় এক সময় অন্যর মাছের হ্যাচারিতে কাজ করতেন পিয়াল। পিয়ালের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাশিমালা গ্রামে। বাবার অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে পারেনি। এসএসসি পাশ করে একদিন সামান্য কিছু টাকা নিয়ে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়েন পিয়াল।
সামান্য কিছু বেতনে অন্যর মাছের হ্যাচারিতে কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। মৎস্য হ্যাচারিতে কাজ করার সময় পিয়াল দেখতে পান দেশীয় মাছের দাম অন্য মাছের তুলনায় বেশি। সেই থেকেই বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছের রেণু উৎপাদনের চিন্তা তার মাথায় আসে। অন্যর মৎস্য হ্যাচারির কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজেই কিছু করার পরিকল্পনা করেন। এরপর ময়মনসিংহ থেকে মৎস্যর উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কয়েক বছর মাছের চিকিৎসক হিসেবে চাকুরি করেছেন। চাকুরি ছেড়ে চলে আসেন বাড়িতে।
এক সময় স্বপ্ন দেখেন নিজের একটি মৎস্য খামার হবে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের শুরুতেই স্বল্প পরিসরে শুরু করেন মাছের রেনু উৎপাদন। মাত্র ৩ বছরের গড়ে উঠেছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য হ্যাচারি। ১ বিঘা ৫ কাঠা জমির উপর গড়ে তুলেছেন তার এই দৃষ্টি নন্দন মৎস্য হ্যাচারি। হ্যাচারির নাম দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৎস্য হ্যাচারি এন্ড মৎস্য খামার।
হ্যাচারিতে উৎপাদন হচ্ছে দেশি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের রেণু। পাশাপাশি তার হ্যাচারিতে উৎপাদন হচ্ছে দেশীয় শিং, রুই, কাতলা, মৃগেল, মাগুর, টেংরা, গুলসা টেংরা, পাবদা, কৈ, থাই কৈ,চিতল, গুচি, পুঁটি, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ ও বাইম, মনোসেক্স তেলাপুইয়া, ভেটকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করা হয়।
অন্য মাছের তুলনায় দেশীয় মাছের চাহিদা এবং দাম ভালো পাওয়ায় মাছ চাষীদের কাছে বাড়ছে দেশীয় মাছের রেণুর চাহিদা। তার খামার থেকে নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় রেণু সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে পিয়াল হোসেনের খামারের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সফল উদ্যোক্তা ও মৎস্য খামারি পিয়াল হোসেন বলেন, এক সময় ডোবায়ও দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সেই পানি খাল, বিল, নদী ও ডোবাতে চলে যাওয়ার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা যায়। এতে করে দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এছাড়া পুকুরে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে ।
তিনি বলেন, সেই চিন্তাধারা থেকে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতেই দেশীয় মাছের রেণুর হ্যাচারি করা হয়েছে। এতে করে বাইরে থেকে রেণু কিনতে হচ্ছে না। এই হ্যাচারি থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২০০ কেজি রেণু উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, মাছের রেণু উৎপাদন করে বেশ লাভবান হচ্ছি। অপরদিকে এলাকার বেকার যুবকরা আমার হ্যাচারি থেকে রেণু পোনা নিয়ে পুকুরে চাষ করে বেকারত্ব দুর করছেন।
বদলগাছী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, পিয়াল হোসেন স্বল্প সময়ে হ্যাচারিতে সফল হয়েছেন। তার কাছ থেকে মৎস্য চাষীরা দেশীয় মাছের রেণু সংগ্রহ করে থাকেন।
তিনি বলেন, মাছ চাষে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অপরদিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষীরা। এর ফলে আগামীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available