আলমগীর মানিক, রাঙামাটি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তারই এক মহিলা সহকর্মী।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের স্বীকার ঐ তরুণীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন এশিয়ান টিভি অনলাইনের রাঙামাটি প্রতিনিধি।
রাঙামাটি বেতারের প্রকৌশলী আবু সাঈদ কর্তৃক ধর্ষণ এবং শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঐ ভুক্তভেগী তরুণী। তিনি বলেন, প্রকৌশলী আবু সাঈদের সাথে আমার ২০১৭ সাল থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। সাঈদ বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেছে।
ভুক্তভোগী তরুণী আরও বলেন, সাঈদ আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে রাঙামাটি এনে আমার সর্বনাশ করেছে। এখন আমাকে বিয়ে না করে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। আমি প্রাণ বাঁচাতে ইতিমধ্যেই জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেছি এবং কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। সাঈদের শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন আমি আর সইতে পারছি না। সে এখন আমাকে বিয়ে না করলে আমার সামনে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ঐ তরুণীর সাথে সম্পর্কে জড়ান প্রকৌশলী আবু সাঈদ। সে সম্পর্ক নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে ভুক্তভোগী তরুণীকে পরবর্তি সময়ে তার বর্তমান র্কমস্থল রাঙামাটি বেতারে নিয়ে আসেন সাঈদ। রাঙামাটিতে আসার পর ঐ তরুণীর সাথে আরও ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রায়ই তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন প্রকৌশলী আবু সাঈদ। এ সময় বাসায় একা পেয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন ঐ ভুক্তভোগী তরুণী। এক পর্যায়ে ঐ তরুণী বিয়ের জন্য চাপ দিলে সাঈদ নিজে এবং অন্যা সহকর্মীদের মাধ্যমে তাকে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। সাইদের অধিনস্থ হওয়ায় অবশেষে নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী তরুণী বাংলাদেশে বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
ভিক্টিমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তরের পরিচালক (অনুষ্ঠান) এসএম আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষ। ১৩ মে শনিবার রাঙামাটি বেতারে সরেজমিনে এসে ঘটনার তদন্ত করে গেছেন উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য বেতার ও প্রকাশনা দফতরের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মো. শরিফুর রহমান এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং এ ব্যাপারে শনিবারে সরজমিনে তদন্ত করে এসেছি, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, তাই আপাতত বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মো. আরিফুল আমিন জানান, আমরা ভূক্তভোগির কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেতার সদর দপ্তরে দেয়া অভিযোগপত্রে ওই তরুণী উল্লেখ করেন, রাঙামাটি বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদের সহায়তায় ভুক্তভোগী রাঙামাটি কেন্দ্রে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের কিছুদিন পর থেকেই প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ তাকে যৌন নিপীড়ন করে আসছেন। এসব ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী তরুণী ২০২২ সালের ৮ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখন সাঈদ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান এবং ওই তরুণীর কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন সাঈদ। এসময় ভুক্তভোগী তরুণীর চাকরি খেয়ে নেয়ার হুমকিও দেন একাধিকবার। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন প্রকৌশলী সাঈদ। এ ঘটনার পর ধর্ষণের স্বীকার তরুণী তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে প্রকৌশলী সাঈদ তাকে বলে, চিন্তা কইরো না, তোমার সব আশা পূর্ণ হবে।
এ অবস্থায় গত ৪ মে প্রকৌশলী আবু সাঈদ ঐ তরুণীকে বলেন, তোমার জন্য সব করতে পারবো, কিন্তু বিয়ে করতে পারবো না। এ কথা শোনার পর ভুক্তভেগী , কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় রাগে, ক্ষেভে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলায় বেতার প্রকৌশল শাখার রাকিব, হারূন ও রিপন এবং তাদের স্ত্রীরা মিলে মারধর করে। পরে জোর করে সাদা কাগজে একটি স্টেটমেন্টে তার সই রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।
শনিবার এ অভিযোগের শুনানিতে রাঙামাটি বেতারকেন্দ্রে ভিকটিম, অভিযুক্ত ও জড়িতদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি।
ভূক্তভোগী তরুণী প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে আসা তদন্ত কমিটি শনিবার আমার সঙ্গে, অভিযুক্ত আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ ও ঘটনায় জড়িত অন্যদের সঙ্গে আলাদা-আলাদাভাবে কথা বলেছে। এখন বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেয় সে অনুসারে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হয় রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদের মুঠোফোনে। এসময় তিনি অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available