• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৬শে ফাল্গুন ১৪৩১ বিকাল ০৪:০৫:২৭ (10-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৬শে ফাল্গুন ১৪৩১ বিকাল ০৪:০৫:২৭ (10-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

পুরো রমজানে সেহরি ও ইফতারে কোনো টাকা লাগে না যে হোটেলে

১০ মার্চ ২০২৫ সকাল ১১:২৪:১০

পুরো রমজানে সেহরি ও ইফতারে কোনো টাকা লাগে না যে হোটেলে

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরের কাঁচাবাজার সংলগ্ন এক ছোট্ট হোটেল। বাইরে থেকে দেখলে সাধারণ মনে হলেও, রমজান মাস এলেই এটি হয়ে ওঠে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক বছরের ১১ মাস ব্যবসা করলেও পুরো রমজান মাস প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোজাদারকে বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার করান।

গত ১০ বছর ধরে তিনি নিজের উপার্জনের একটি বড় অংশ সংরক্ষণ করে রোজাদারদের জন্য এ আয়োজন করছেন। তার এই মহতী উদ্যোগ শুধু স্থানীয় মানুষদেরই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী, যাত্রী, রোগীর স্বজনসহ অসংখ্য মানুষের উপকারে আসে।

রমজানে শহরের অনেক খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় সেহরি ও ইফতারের জন্য অনেকেই সমস্যায় পড়েন। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১১ মাস ব্যবসা করি, আল্লাহর রহমতে লাভও হয়। সেই লাভের কিছু অংশ আলাদা করে রেখে রমজানে বিপদগ্রস্ত ও ছিন্নমূল মানুষদের জন্য বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করি। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় শান্তির কাজ।’

২০১৬ সালে শুরু করা এই মহতী উদ্যোগে তার ১২ জন কর্মচারীও স্বেচ্ছায় এক মাসের জন্য পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করেন। তারা একাত্ম হয়ে মানুষের সেবা করেন, যেন রফিকুল ইসলামের এই উদ্যোগ আরও সফল হয়।

সেহরির খাবারের তালিকায় থাকে গরুর মাংস, মাছ, ভাজি, ডাল ও এক গ্লাস দুধ। ইফতারে পরিবেশন করা হয় বিরিয়ানি, ছোলা বুট, বুন্দিয়া, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি ও শরবত। খাবার শেষে কেউ টাকা দিতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘রমজানে আমার হোটেলে খাবারের জন্য টাকা দিতে হয় না। এটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছি।’

রফিক হোটেলে অনেকেই বিনামূল্যে খাবার পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। কাঁচামাল ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, ‘সেহরির সময় খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। লোকমুখে শুনে এখানে এলাম, দেখলাম সবাই ফ্রি সেহরি খাচ্ছেন। খাওয়ার পর টাকা দিতে চাইলেও নিলেন না। এমন মানুষ সত্যিই বিরল।’

হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ভাইপোকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি, রাতে কোথায় সেহরি খাব বুঝতে পারছিলাম না। এখানে এসে দেখি সবাই সেহরি খাচ্ছে, আর টাকা দিতে চাইলে জানলাম এখানে কোনো বিল লাগে না! সত্যিই অনেক উপকার হলো।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘রাতে আমার ডিউটি ছিল। বাসায় গিয়ে সেহরি খাওয়া কষ্টকর হতো। এখানে এসে মাংস, শিম ভাজি, ডাল আর এক গ্লাস দুধ দিয়ে সেহরি করলাম, আলহামদুলিল্লাহ! তার জন্য দোয়া করি।’

রফিকুল ইসলামের হোটেলের কর্মচারীরাও এক মাস বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন। কর্মচারী বুদা মিয়া বলেন, ‘মালিক যেখানে এক মাস ধরে তিনশোর বেশি মানুষকে ফ্রিতে খাওয়াচ্ছেন, সেখানে একটু শ্রম দিলে সমস্যা কী? ১১ মাস তো বেতন পাই, এক মাস শুধু খাবার দেয়, তাছাড়া ঈদে বেশি বোনাসও দেন। এই কাজ করতে পেরে ভালোই লাগে।’

রফিকুল ইসলামের এই উদ্যোগ শুধু জয়পুরহাটেই নয়, গোটা দেশেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রফিক একজন সামান্য হোটেল ব্যবসায়ী হলেও তার হৃদয় অনেক বড়। সমাজের অনেক বিত্তবান রয়েছেন কিন্তু তারা এমন উদ্যোগ নেন না। শুধু টাকা থাকলেই হয় না, মানবতার মনও থাকতে হয়। রফিক আসলে মানবতার ফেরিওয়ালা।’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই কাজ আমি যতদিন বেঁচে থাকব চালিয়ে যেতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ আমাকে এই সেবা চালিয়ে যাওয়ার তৌফিক দেন।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ