শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে নার্স আয়া মিলে এক নারীর প্রসব করান। গর্ভে উল্টে থাকা শিশুটিকে দীর্ঘসময় টানাটানি পর প্রসব করা হয়। প্রসবের পরপরই নবজাতক শিশুটির মৃত্যু হয়।
১৫ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বরমী সড়ক সংলগ্ন কথিত মালা ডাক্তারের বাড়ির মা-ডায়গ্নষ্টিক সেন্টারে হাতুড়ে ডাক্তারের হাতে নবজাতক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আশংকাজনক অবস্থায় প্রসুতিকে প্রথামে শ্রীপুর পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগী নারী উপজেলার বেড়াইদের চালা গ্রামের মো. আরিফের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (২৪)।
স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার বিকেলে সুনিয়ার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। ফোনে বিষয়টি ডাক্তার মালাকে জানালে তিনি তার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। বিকেল পৌনে চারটারদিকে আমরা ওই ক্লিনিকে যাই। সেখানে মালা অনুপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি জানান ঢাকায় আছেন। মেয়েরা ডেলিভারি করাতে পারবে সমস্যা নেই। এক পয়ায়ে নার্স সুমাইয়া ও আয়া জরিনা ও মারজিয়া একাধিক ফরমে প্রসূতির মা, প্রসূতি ও তার স্বামীর স্বাক্ষর নেয়। পরে ওই নার্স আয়া সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রসব করাতে থাকেন। প্রথমে শিশুটির দু’পা বের হয়। দু’হাত আটকে যায়। অনেক টানাটানি করে দুই হাত বের করা হয়। তখন মাথা আটকে যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নার্স আয়ারা ঘার মুচড়ে চাপ দিয়ে মাথা বের করার চেষ্টা করে। তখনো শিশুটির প্রাণ ছিল। টানাটানি করে বের করার পর মুহূর্তেই নবজাতক মারা যায়। স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তার মালার নির্দেশনায় নার্স আয়ারা প্রসব করানোর সময় তাদের অদক্ষতা আর দায়িত্ব হীনতার কারণে আমাদের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
প্রসূতির মা জানান, সুনিয়া তিন মাসের অন্ত:সত্তা অবস্থা থেকে মালা ডাক্তার তার চিকিৎসা করতেন। অনেক বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বলেছেন বাচ্চা উল্টা। অনেক ওষুধ দিয়ে মালা বলেছেন নরমাল ডেলিভারি হবে। সুনিয়ার প্রসব ব্যথা শুরু হলে ডাক্তার মালার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি তার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। আমরা সেখানে গিয়ে তাকে পাইনি। তিনি জানান তার মেয়ের সিজার হওয়ায় ঢাকায় আছেন। কোনো সমস্যা হবে না। মেয়েরা প্রসব করাতে পারবে। পরে আমাদের নিকট থেকে একাধিক ফরমে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে প্রসব করানোর সময় প্রথমে শিশুটির দু’পা বের হয়। দু’হাত আটকে যায়। অনেক টানাটানি করে দুই হাত বের করা হয়। তখন মাথা আটকে যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নার্স আয়ারা ঘার মুচড়ে চাপ দিয়ে মাথা বের করার চেষ্টা করে। তখনো শিশুটির প্রাণ ছিল। টানাটানি করে বের করার পর মহুর্তেই নবজাতক মারা যায়। নার্স আয়ারা টানাটানি করে প্রসব করাতে গিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলে।
এদিকে মালা ডাক্তারের বাড়িতে শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্থানীয়রা জড়ো হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মতিনুর বেগম মালা এক জন স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি নিজেকে ডাক্তার লিখে রোগীর ব্যবস্থা পত্র দিয়ে থাকেন। তার ক্লিনিকে একাধিক বার নারী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এলাকাসী এ অপচিকৎসা বন্ধের দাবি করছি।
মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে কথিত ডাক্তার মালা জানান, মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে রয়েছেন। তাকে ফোন করে জানো হয়েছে। বাচ্চা নরমাল হবে। পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে নরমাল বাচ্চা হয়েছে। তাদেরকে অন্যত্র নিতে বলা হয়েছিল। তারা যায়নি। পরে শুনেছি দুর্ঘটনার কথা। আমি এসে বিষয়টি দেখবো।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পটনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এমবিবিএস, বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না। জাহাঙ্গীর আলম ও মতিনুর বেগম প্যাডে ডাক্তার লিখেছে এটা করতে পারে না। অগ্রিম পেড লিখে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন এটি অপরাধ। কোনো ডাক্তার অগ্রিম প্রেসকিপসন লিখে রাখতে পারে না। মা-ডায়গ্নস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা হবে।
শিশু মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, ওই ক্লিনিকে প্রসব করানোর সময় এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভড করেননি।
শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হেব।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available