পাবনা প্রতিনিধি: পেঁয়াজের ভান্ডার ক্ষ্যত পাবনার বেড়া সাঁথিয়ায় গত বছর পেঁয়াজ চাষে ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি ছিলেন চাষিরা। তবে চলতি বছর মুড়িকাটা (মুলকাটা) পেঁয়াজে ব্যাপক দরপতনের লোকসানের কারণে শঙ্কায় রয়েছে হালি পেঁয়াজ নিয়ে। দেখা যাচ্ছে হালি পেঁয়াজেও বর্তমান বাজার হিসাবে লোকসানেই বিক্রি হচ্ছে।
গেল বছর এই সময়ে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে সাঁথিয়াতে প্রতি রাতেই খেত থেকে কাঁচা পেঁয়াজ চুরি হয়েছিল। তার পর থেকে চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিয়েছিলেন অনেক পেঁয়াজ চাষিরা। কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই খেত থেকে পেঁয়াজ তুলেও ফেলেছিলেন । তাতে সে সময়ে পেঁয়াজ চুরির বিষয়টি বেড়া-সাঁথিয়ায় আলোচনার শীর্ষে ছিল।
চলতি বছেরেও পেঁয়াজ রসুন চুরি ঠেকাতে আগে থেকেই মাঠের ভেতরে ছাউনি (ঝুপড়ি) ঘর তুলে দল বেধে সাড়া রাত পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা। রাত আসলেই চাষিদের চোখেমুখে আতংঙ্কের ছায়া নেমে আসে। সন্ধ্যায় দ্রুত খাবার সেরে হাত লাইট (টর্চ) নিয়ে বেড়িয়ে পরেন খেতের উদ্দেশ্যে। দলে দলে পাহারায় সাড়া রাত পাহারা দেন তারা।একদিকে এই ফসলের যেমন দরপতনে হতাশ,অন্যদিকে চোরের আতংঙ্ক। সব মিলিয়ে মহাবিপদে চাষিরা।
স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সাঁথিয়ায় ১৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১৫০০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। ৪-৫ দিন ধরে উপজেলায় হালি জাতের কিছু পেঁয়াজ বাজারে উঠছে, তবে সেগুলো সম্পূর্ণ পুষ্ট না। এখনোও পেঁয়াজ ও রসুন পুরোপুরি পুষ্ট না হওয়ায় তোলা যাচ্ছে না, হয়তো ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে।
তবে আগাম চাষ করা কিছু পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন চাষিরা। বর্তমানে হালি পেঁয়াজ বাজারে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ টাকা। আর হালি পেঁয়াজে এই খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। তবে স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে যথাক্রমে ৪১ ও ৩৮ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে মাত্র ১৩ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকের।
সাঁথিয়া উপজেলার ভাট সোনাতলা এলাকার কৃষক কালু মোল্লা জানান, এ বছর ধার দেনা করে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। বাড়ি থেকে পেঁয়াজের খেত একটু দূরে হওয়ায় সব সময় পাহাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না, গেল বছর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খেত থেকে অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ চুরি হয়েছিল, তাই এবছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। রাতে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার জমিতে টহল দেন। তবে দাম কম থাকায় তিনি এবছর সাড়া রাত খেতে থাকছেন না।
উপজেলার পাটগাড়ি গ্রামের চাষি জাইদুল ফকির জানান, এক বিঘা রসুন ও দুই বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করেছেন তিনি। এবছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। গেল বছর ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের খেতে চোরের উৎপাত খুব বেড়ে গিয়েছিল। এবার দেখছি নিজের বাড়িতেও থাকাও নিরাপদ নয় ,তারপরেও জীবনবাজি রেখে রাতে খেতে থাকছি,পেঁয়াজ ও রসুন পাহারা দিচ্ছি।
একই এলাকার চাষি হারুন মোল্লা, রবি মোল্লা ও আশরাফুল জানান, তারাও এক একজন দুই তিন বিঘা করে পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করেছেন। চুরি ঠেকাতে সবার সাথে তারাও রাতে খেতেই থাকছেন। কয়েক দিন রাতে পাহারা দেওয়ার পরেও পুরো পুষ্ট হওয়ার আগেই জমির থেকে কিছু রসুন তুলে নিয়েছেন তারা। পেঁয়াজেন জন্য এখন রাতে খেতে থাকতে হচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, পেঁয়াজ খেতের সব পেঁয়াজই বেশ বড় হয়েছে। দুই হাতে একসঙ্গে হালকা করে গাছ ধরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১০ থেকে ১২টা পেঁয়াজ উঠে আসে। তাই সুযোগমতো দুই-তিনজন চোর এসে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে পারবে তাই এ বছর আগে থেকেই সাবধান হয়েছেন তারা।
সরেজমিনে সাঁথিয়া উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের খেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতের বেলা কৃষকেরা কয়েকজন মিলে সেখানে বসে পেঁয়াজ খেত পাহারা দেন। এ ছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ রসুন তুলে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার বলেন, পেঁয়াজের আবাদ ভালো হয়েছে। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজে কৃষকেরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন না এ বিষয়ে আসলে তাঁদের তেমন কিছু করার নেই। তারা শুধু উৎপাদনের বিষয়টি দেখেন । তবে এখনোও হালি পেঁয়াজ বাজারে আসেনি। বাজাওে হালি পেঁয়াজ আসলে কৃষকেরা সঠিক দাম পেতে পারে। যেহুতু হালি পেঁয়াজ সংরক্ষন করা যায়। গেল বছর চুরির ঘটনা ঘটলেও এবছর এমন ঘটনা ঘটেনি। পেঁয়াজ রসুন চুরির বিষয়টি স¤পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানানো হবে। থানা-পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রচেষ্টায় এ ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। আর যার যার মাল সেতো দেখে রাখবেই।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সাঁথিয়া থানার বিভিন্ন জায়গায় রাতে তাদের টহলপার্টি নিয়মিতই টহলে থাকেন। থানা পুলিশ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পেঁয়াজ খেতে চাঁষিরা রাতে পাহারা দিচ্ছেন, যার যার অবস্থান থেকে সবাই সতর্ক থাকুক। তাদের সহযোগীতায় থানা পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available