• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩১ বিকাল ০৪:৪৪:১৮ (28-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩১ বিকাল ০৪:৪৪:১৮ (28-Mar-2025)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

নৃত্য আর মনভোলানো কণ্ঠে গান গাইতে পারাটাই কাল হয়েছিল তনুর

২১ মার্চ ২০২৫ বিকাল ০৩:১৬:০১

নৃত্য আর মনভোলানো কণ্ঠে গান গাইতে পারাটাই কাল হয়েছিল তনুর

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: চোখ ধাঁধানো নৃত্য আর মনভোলানো কণ্ঠে গান গাইতে পারাটাই কাল হয়েছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সুন্দরী থিয়েটারকর্মী সোহাগী জাহান তনুর।

চোখে মুখে হাসি লেগে থাকা মেয়েটি নৃত্যে প্রথম হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। ভিক্টোরিয়ার ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী তনুর পারফরম্যান্স জেলার সীমানা পেরিয়ে বিস্তৃত হয় বিভাগীয় পর্যায়েও। মা-বাবার সাথে কুমিল্লা সেনানিবাসে বসবাসের সুবাদে সেনাসদস্যদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিতো সে নিয়মিত। ভাগ্যের পরিহাস, শৈশব কৈশোর পার করা চিরদিনের চিরচেনা নিজেদের সেনানিবাসের মাটি থেকেই তনুকে উড়াল দিতে হলো আকাশে, পথভ্রষ্ট কতিপয় সেনা সদস্যদের নির্মমতার ব-লি হয়ে।

সাড়ে আট বছর আগের কথা। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী বাবা ইয়ার হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগমের জানা ছিল না, সেনানিবাসে মঞ্চ মাতানো আদরের রাজকন্যা সোহাগী ঘুম হারাম করেছিলো কতিপয় অফিসার এবং সিপাহির। চলার পথে নিয়মিত বিরক্ত বিব্রত করা হলেও মা-বাবার কাছে তা প্রকাশ করেনি তনু। নাচ-গান থেকে যা উপার্জন হতো সামান্য, তার সাথে আরেকটু স্বাবলম্বী হতে পড়ন্ত বিকেলে সেনানিবাসের ভেতরে বাচ্চাদের প্রাইভেটও পড়াতো মেধাবী তনু। সার্জেন্ট জাহিদ এবং সিপাহি জাহিদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাদের পারিবারিক টিউটর হিসেবে। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ তেমনি একটা অশুভ বিকেল শেষবারের জন্য এসেছিল সোহাগী জাহান তনুর জীবনে।

তনুকে পেতে লোলুপ দৃষ্টি দিনকে দিন বাড়তে থাকে জলপাই রঙের কতিপয় ক্ষুধার্ত হায়েনার মাঝে। বিয়ের প্রস্তাব গোমতির জলের মতো প্রবাহিত হয় তাদের বাড়ির আঙিনায়। মা-বাবাকে তনু জানিয়ে দেয়, অনার্স শেষ না করে বিয়ে নয়। নিজের চরিত্রেও কোনো কলঙ্ক না লাগাতে সজাগ সচেতন ছিল তনু। এরই মধ্যে সেনানিবাসে প্রভাবশালী এক অফিসারের ভালো লাগে তনুকে, ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও। তনুর বিধিবামের যাত্রা হয় শুরু। পথভোলা ঐ অফিসারের স্ত্রী নিজ সংসার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে, তনুকে শায়েস্তা করতে যোগাযোগ করে এদিক সেদিক। সেনানিবাসের ভেতরে পরিকল্পনায় বেগ পেতে হয়নি। সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রী হ্যাপির সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয় টিউশনি শেষে তনুকে তুলে নিয়ে যাবার।

ভয়ংকর সন্ধ্যার লালিমা তখনো কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পশ্চিমাকাশে। সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এসে থামে সার্জেন্ট জাহিদের বাসার সামনে। তনুকে টার্গেট করা প্রভাবশালী সেনা অফিসারের স্ত্রী, মাস্টারমাইন্ড ঐ মহিলার উপস্থিতিতে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় তনুকে। তনুকে উঠিয়ে নেবার দৃশ্যটি যারা দূর থেকে সরাসরি দেখেছে তাদেরই একজন পরে বিষয়টি অবহিত করে তনুর বাবাকে। এদিকে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠাবার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় তনু বাসায় কল দিতে চাইলে কেড়ে নেয়া হয় ফোন। গাড়ি ছুটে চলে সেনানিবাসের ভেতরেই আরেক অফিসারের খালি বাসায়, যেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয় ক্ষুধার্ত হায়েনাদের। মঞ্চের তনু তখন তাদের হাতের নাগালে।

এদিকে বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় তনুর মা আনোয়ারা বেগম অস্থির হয়ে সর্বত্র যোগাযোগ শুরু করে। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন শরণাপন্ন হয় মিলিটারি পুলিশের। তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় গেলে তার স্ত্রী হ্যাপি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। ওদিকে দল বেঁধে পাশবিকতার সীমা অতিক্রম করায় অচেতন হয়ে পড়ে সোহাগী জাহান তনু। ধস্তাধস্তিতে নাকে এবং মাথার পেছনের অংশে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট সেনা সদস্যদের বর্বরতা থামেনি। তনুর নিথর দেহ গুম করার সিদ্ধান্ত হয়। এক পর্যায়ে ক্যান্টনমেন্টের সীমানার বাইরে অচেনা অজানা কোথাও নেয়া হলে তুলনামূলক বেশি ঝুঁকি থাকায় ভেতরেই কার্য সম্পাদনের উদ্যোগ নেয় অপরাধীরা।

সেনানিবাসের ভেতরে জঙ্গলে মাটিচাপা দেয়ার সুযোগ অবশ্য হয়ে উঠেনি, চারিদিকে তনুর খোঁজে ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যাওয়ায়। রাতের প্রথম প্রহরে নিথর দেহ খুঁজে পাওয়ার পর সার্জেন্ট জাহিদ এবং সিপাহি জাহিদ কেউই দেখতে আসেনি তনুকে, খবরও নেয়নি। দুই জাহিদকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সরিয়ে নেয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় তনুকে অপহরণের পর থেকে আরেক অফিসারের বাসা হয়ে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার মিশনে সিভিল পোশাকে ১০-১২ জন সেনাসদস্য সম্পৃক্ত ছিল। প্রভাবশালী অফিসারের স্ত্রী সরাসরি জড়িত থাকায় রাতেই কেঁপে উঠে কুমিল্লা সেনানিবাস। জেলার সীমানা পেরিয়ে দেশে বিদেশে শুরু হয় তুলকালাম। হত্যার বিচার দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ।

তনু হত্যার সময় সেনানিবাসের দায়িত্বে থাকা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল এনায়েত উল্লাহ এবং স্টেশন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম পুরো বিষয়টি খুব কাছ থেকে জানলেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার মিশনে মাঠে নামে। কুমিল্লার সাংবাদিকদের কল রেকর্ডের আওতায় এনে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয় শুরুতেই। তনুর মা-বাবার মুখে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। তালার ফাঁক দিয়ে তারা মুখ খোলার চেষ্টা করে বারবার খায় হুমকি ধামকি। কর্নেল মাসুদ নামে একজন শাসায় তনুর বাবাকে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামদা প্রসাদ সাহা এবং তার সহকারী ডা. শারমিন সুলতানা উভয়কেই তখন ম্যানেজ করে নেয়া হয়।

মেডিকেল বোর্ডের ময়নাতদন্ত হয়ে যায় তোতাপাখি। শিখিয়ে দেয়া বুলি উপহার দিতে থাকে কামদা প্রসাদ সাহা গং। প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে হত্যার কোনো আলামত খুঁজে না পাওয়ার গল্প শোনানো হয় ম্যাংগো পিপলকে। কবর থেকে মরদেহ উঠিয়ে আরেক দফায় করা ময়নাতদন্তের ফলাফল হিসেবে তনুর যৌন মিলনের হাস্যকর রিপোর্ট দেয়া হয়। একদিকে বলা হয় ডিএনএ টেস্ট ছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়া যাবে না, অন্যদিকে বলা হয় নিশ্চিত না হয়ে কারো ডিএনএ টেস্ট করা যাবে না। কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খানের আন্তরিকতা মাঠে মারা যায় উপরের নির্দেশে। ঢাকা থেকে আইওয়াশ করতে কুমিল্লায় যায় সিআইডির শীর্ষ তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দ। থানা পুলিশ থেকে শুরু করে ডিবি, সিআইডি, পিবিআই হয়ে বিচারের মূলা ঝুলানো হয় অবিচারের হাইকোর্টে। 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ