মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি নিজের বাসায় মদ পান করার পর ভুক্তভোগী আম্বিয়া খাতুনকে হয়রানি করেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন আম্বিয়া খাতুন। অভিযোগে তিনি সিভিল সার্জনের নিয়মিত মদ্যপান এবং নারীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ভুক্তভোগী আম্বিয়া খাতুন (৩৮) সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার মো. আলমগীরের স্ত্রী এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে কর্মরত।
আম্বিয়া খাতুন জানান, তিনি আট বছর আগে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে আয়া হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ছয় মাস আগে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামের বাসায় কাজ করতেন রবিউল ইসলামের স্ত্রী রেক্সোনা খাতুন। পরবর্তীতে তাকে শ্যামনগরে বদলি করা হয়। রেক্সোনা খাতুনকে বদলি করে দেওয়ার পর, সিভিল সার্জন অফিস থেকে আম্বিয়া খাতুনকে তার বাসায় রান্নাসহ যাবতীয় গৃহস্থালি কাজের দায়িত্ব নিতে আদেশ দেওয়া হয়। গত ছয়মাস ধরে তিনি সেখানে কাজ করছিলেন। তবে, এ সময় সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম তাকে বোরকা ও হিজাব খুলে কাজ করার নির্দেশ দিতেন এবং আপত্তিকর ইঙ্গিত করতেন। এমনকি সম্প্রতি তাকে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেন।
তার এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, একদিন তিনি আম্বিয়া খাতুনকে বাসার একটি কক্ষে ডেকে দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এরপর কান্নাকাটি করতে করতে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে এসে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান।
তিনি আরও বলেন, সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে এসব ঘটনা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর ১৬মার্চ লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ করার তিনদিন পর গত ১৯ মার্চ সিভিল সার্জন অফিসের ডা. জয়ন্ত কুমার স্যার তাকে ডেকে এনে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন মর্মে সাদা কাগজে ২ লাইনে লিখে তার স্বাক্ষর নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের বাসায় আগে ১০ থেকে ১২ বছর আয়া হিসেবে কাজ করেছেন রেকসোনা খাতুন। কয়েক মাস আগে তাকে শ্যামনগরে বদলি করা হয়।
রেকসোনা খাতুন জানান, তিনি কর্মজীবনে পাঁচ থেকে ছয়জন সিভিল সার্জনের অধীনে কাজ করেছেন এবং তাদের বাসায় রান্নাসহ যাবতীয় কাজ সামলেছেন। আগের সিভিল সার্জনরা ছিলেন সম্মানীয় ব্যক্তি, কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম তাকে অসভ্য ইঙ্গিত ও কুপ্রস্তাব দিতেন। তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্যামনগরে বদলি করে দেওয়া হয় এবং তার জায়গায় আম্বিয়া খাতুনকে বাসার কাজে রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, ‘শুনেছি আম্বিয়ার সঙ্গেও ভয়ংকর অপরাধ করেছেন, যা মুখে বলা যায় না। এর আগে এত অসৎ অফিসার দেখিনি। এই নারীলোভী সিভিল সার্জনের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জয়ন্ত কুমারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তার অফিসে কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, আর তাকে জিম্মি করে নিয়োগে হস্তক্ষেপ করানোর উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available