• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৯শে চৈত্র ১৪৩১ রাত ০৮:২৩:৫০ (02-Apr-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৯শে চৈত্র ১৪৩১ রাত ০৮:২৩:৫০ (02-Apr-2025)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

ইমতিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও টাকা প্রদানে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

১ এপ্রিল ২০২৫ দুপুর ১২:০৪:৫৩

ইমতিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও টাকা প্রদানে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

নোয়াখালী প্রতিনিধি: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর চাটখিল থানা থেকে লুট করা অস্ত্রে প্রাণ হারানো মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গেজেটভুক্ত শহীদের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

৩০ মার্চ রোববার নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ২৭ মার্চ জেলা প্রশাসক নিজেই মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের বাবা মো. হাবিবুর রহমানের হাতে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।

ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়ারী মিয়া বেপারী বাড়ির মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে।

জানা যায়, গত ২৭ মার্চ জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ১৪ জন শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকারীদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র, ১০ জন ‘এ’ ক্যাটাগরি আহতদের মাঝে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা এবং ৪০ জন ‘বি’  ক্যাটাগরি আহতদের মাঝে জনপ্রতি ১ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের ১ম পর্বের চেক বিতরণ করেন।

সঞ্চয়পত্র ও চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মরিয়ম সিমি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইসমাইল, নোয়াখালী সেনাবাহিনী ক্যাম্পের লে. তানভীর আহমেদ, নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখিনুর জাহান নীলা, ছাত্র সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান ও ফরহাদুল ইসলামসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে জুলাই আন্দোলনে ‘আত্মঘাতিকভাবে মৃত’ আখ্যা দিয়ে তার নাম গেজেটভুক্ত শহীদ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

এতে বলা হয়, চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ পেশায় কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যান ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের খবরে চাটখিল থানায় ঢুকে লুট করে নিয়ে আসেন অস্ত্র। পুলিশের অস্ত্র নিজের কোমরে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে স্থান ত্যাগের সময় পথিমধ্যে আত্মঘাতি বুলেট লাগে তার পায়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সে আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল- এমন কোনো তথ্য বা ছবি পাওয়া যায়নি। তার আন্দোলন অবস্থায়ও কোনো প্রমাণপত্র নেই। এমতাবস্থায় উক্ত বিষয়টি তদন্ত পূর্বক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শহীদদের গেজেট তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অবাক হয়েছি কীভাবে একজন আত্মঘাতি ব্যক্তি শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। আবার জেলা প্রশাসক ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম কোথাও ছিল না। তারপরও কীভাবে এতদূর গড়িয়েছে তার জন্য তদন্ত করা দরকার। এছাড়াও তারা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জেনেছি। এখনো আহত যোদ্ধারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা ইমতিয়াজের পরিবারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে ৫ আগস্ট বিকেলে সোনাইমুড়ী থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে উত্তেজিত জনতা। তার প্রায় এক ঘণ্টা পর একই ঘটনা ঘটে চাটখিল থানায়। প্রাণভয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায় পুলিশ। উত্তেজিত জনতা থানা লুট করে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। সেদিন থানা থেকে লুট করা আগ্নেয়াস্ত্রে ইমতিয়াজ নামে একজন আত্মঘাতি গুলিতে আহত হন। তারপর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসায় ঢাকায় নেওয়া হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এরপর মামলার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা বাণিজ্য হয়েছে। তখন শহীদ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য ইশারায় ফের তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করছে একটি চক্র।

তবে ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান দাবি করেন, তার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার ছেলের পেটে গুলি লেগেছে। থানার অস্ত্র লুট করেছে মানলাম কিন্তু সে অস্ত্র যদি তার কোমরে থাকে তাহলে পায়ে বা মাথায় গুলি লাগার কথা। পেটের ভেতরে গুলি লাগার কথা নয়। আমার ছেলেকে থানার অস্ত্র দিয়েই অজ্ঞাত কেউ হত্যা করেছে। তাই তাকে শহীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ৮ লাখ টাকা নয়, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা দিয়েছে।

তৎকালীন চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের শহীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম বাদ যায়। যে যে ক্রাইটেরিয়াতে শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার ভেতরে সেটি পাওয়া যায়নি।

চাটখিল উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাই শেষে প্রেরিত প্রতিবেদনের আলোকে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। তখন কোনো আপত্তি কেউ দেইনি। যদি কেউ আপত্তি দিত তাহলে পুনরায় তদন্ত হতো। তবে যেহেতু বর্তমানে সমালোচনা হচ্ছে তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, শহীদদের যাচাই-বাছাই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে হয়েছে। তারা তখন বিষয়টি নিয়ে আপত্তি দিলে আমরা ভেবে দেখতাম। তবে অভিযোগ যেটি পেয়েছি সেটির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ