নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: হারিয়ে যাওয়া কোনো প্রিয়জন কিংবা প্রিয় বস্তু ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা করাটা যে কতটা যন্ত্রণার, কতটা কষ্টকর, তা কেবল তিনিই জানেন যিনি হারান। আবার যখন সেই হারানো প্রিয় বস্তু কিংবা প্রিয় মানুষ ফিরে আসেন তখন ওই ব্যক্তি খুশিতে আত্মহারা হন। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর গ্রামের আশিকুর রহমান জামালের সঙ্গে যিনি ৩৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর গ্রামের মো. আক্কাস মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম নিখোঁজ হন ১৯৮৮ সালে। মাত্র চার বছরের ছোট্ট ছেলে আশিকুর রহমান জামালকে রেখে অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে চলে যান তিনি। সেসময়ে আত্মীয়-স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি।
এক পর্যায়ে জানা যায়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে একটি চক্র পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কারা এই ঘটনার পেছনে ছিল, তা আজও অজানা রয়ে গেছে। সেই থেকে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায় দীর্ঘ ৩৬ বছর। সেই ছোট্ট ছেলে আশিকুর রহমান জামালের বয়স বর্তমানে ৪০ বছর। এখন তিনি গণমাধ্যমে কাজ করছেন। বুঝতে শেখার পর থেকে দীর্ঘ এত বছর ধরে তার মাকে খুঁজছেন। পাকিস্তান থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে তিনি যোগাযোগ করতেন, আশা করতেন কোনো সূত্র পাওয়া যাবে কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেছে, তার মায়ের কোনো খোঁজ মেলেনি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘দেশ ফেরা’ গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস নজরে আসে আশিকের এক খালাতো বোনের। স্ট্যাটাসে এক নারী আকুতি করে বলেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান, তার সন্তান ও পরিবারের কাছে যেতে চান। ভিডিওটি আশিককে দেখানো হলে তিনি নিশ্চিত হন, এটাই তার মা। এরপর যোগাযোগ শুরু হয় ও একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন আশিক ও তার পরিবারের সদস্য।
৩৬ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি আশিক। তিনি বলেন, ‘মাকে খুঁজে পেয়ে মনে হচ্ছে আমি নতুন একটা পৃথিবী ফিরে পেয়েছি। জন্মের পর থেকেই আমি এতিমের মতো বড় হয়েছি। এখন সেই শূন্যতা দূর হলো। আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই মায়ের দেখা পাব।’
আশিকের মা ঝরনা বেগম বা বর্তমানে জরিনা বেগম নামে পরিচিত এই নারী এখন বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে ফিরতে চান। তার স্বজনরাও এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে পাকিস্তান থেকে ভিসা পাওয়া সহজ নয় বলে আশিক নিজেই গেছেন মায়ের সাথে দেখা করতে।
গত ৩০ মার্চ আরব এয়ারের একটি বিমানে করে মায়ের সাথে ঈদ পালন করতে পাকিস্তানের করাচির সিন্ধীতে গেছেন আশিক। সেখানে মায়ের হাতের রুটি, সেমাই খেয়ে ঈদ পালন করেন মায়ের সাথে। এখন মাকে নিয়ে দেশে ফিরবেন আশিক, সে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পরিবারের সদস্যরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available