মিরপুর ও ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়ির মঠের পাশে বিস্তীর্ণ কালী নদীতে সবুজের মধ্যে সাদা, হালকা গোলাপি সাথে বেগুনি রঙের রাশি রাশি ফুল ফুটে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ছবি।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে লালন আখড়াবাড়ির পাশে কালি নদীতে অপরূপ এই ছবি তৈরি করেছে কচুরিপানার ফুল। ফুলটি কোনো সুবাস না ছড়ালেও এর নান্দনিক রূপে মুগ্ধ শহরবাসী ও দেশ থেকে আগত পর্যটকেরা । প্রাকৃতিক প্রেমিকেরা লালন আখড়াবাড়ির মাঠের পাশে কালী নদীর ঘাটে অবস্থান করছে প্রতিদিন।
এদিকে আবহমান গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি জলজ উদ্ভিদের নাম "কচুরিপানা"। কুষ্টিয়া সহ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় নদী, শস্য-শ্যামল সবুজে ভরপুর ছোট বড় হাওর, বিল, ঝিল ও বাড়ির পাশের ডোবায় এখন দৃষ্টিনন্দন কচুরিপানা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি বহু-বর্ষজীবী ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia crassipes। বাংলাদেশে বেশ কিছু নদীতে, বিল-ঝিল-হাওর-বাঁওড়ে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে বিভিন্ন ঋতুতে।
৭ মার্চ সোমবার বিকেলে লালন আখড়াবাড়ির মাঠের পাশে কালী নদীর ঘাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যেন ফুলের চাদরে ঢেকে আছে কালী নদীর এই ঘাট সহ এ এলাকার সম্পূর্ণ নদী। ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষ ও পর্যটকেরা একটু উপভোগ করে নিচ্ছেন এ সৌন্দর্য। অনেক শৌখিন আলোকচিত্রী ক্যামেরা বন্দী করছেন এ মনোরম দৃশ্য। যাঁর ক্যামেরা নেই, তিনি মুঠোফোনেই ধরে রাখছেন এ ভালো লাগা ভালোলাগার এই মুহূর্তগুলোকে।
স্থানীয় লোকজন জানান, কালি নদীর এই ঘাটে দীর্ঘ জলাশয় ছয় মাস আগেও পরিষ্কার ছিল। এ নদীর পানিতে মাছ চাষ করা হয় ১২ মাসে-ই । তবে কয়েক মাস ধরে দিনে দিনে বিস্তীর্ণ এ নদীতে কচুরিপানায় ভরে ওঠেছে। এরপর ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে এর আগে কখনো একসঙ্গে এত ফুল দেখা যায়নি। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জলাশয় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মনোরম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ফুলের শোভা দেখতে কিংবা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে কালী নদীর এই ঘাটে কাছে ভিড় জমাতে থাকে শহরের লোকজন ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এবং বিদেশ থেকে আগত পর্যটকরা।
কুষ্টিয়ার প্রকৃতি প্রেমিক ও আলোকচিত্রী তানভীর অমি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ছবি তোলেন। বহু রকম ফুলেরও ছবি তুলেছেন। কিন্তু একসঙ্গে কখনো কচুরিপানার এত ফুল দেখেননি। তাই খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন ছবি তুলতে।
শহরের কোটপাড়া এলাকার মলি খাতুন বলেন, ‘কচুরিপানাকে এত দিন আগাছা বলেই জানতাম। সেই কচুরিপানার ফুলে যে এত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে, তা এখানে না এলে বুঝতাম না।’
মলি খাতুন আরও জানান, গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা ফুলটিকে অনেকে ‘হেনা’ বলে ডাকেন। কিছু এলাকায় এটি ‘কস্তুরি’ ফুল নামেও পরিচিত।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক কলেজ ছাত্রী বলেন, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন খালবিলে প্রতি বছর বর্ষার পানিতে বিলের চারপাশ কচুরিপানায় ভরে যায়। তবে লালন আখড়া বাড়ির মাঠের পাশে কালী নদীর মুক্ত জলাশয়ে ফুটন্ত কচুরিপানা ফুল প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এ অরূপ সৌন্দর্য মনকে মাতিয়ে যাচ্ছে। উষ্ণতা বয়ে আনছে প্রকৃতিপ্রেমিদের হৃদয়ে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কচুরিপানার ফুলের যে এমন সৌন্দর্য থাকে তা চোখে না দেখলে হয়তোবা জানাই হতো না। নদীর পাশে এমন অপরূপ শোভা চিত্তবিনোদনে খুলে দেয় আনন্দের দুয়ার।
সান আপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের কেজি শ্রেণীর ছাত্র শাফায়েত চৌধুরী বলেন, জীবনে একসঙ্গে এতগুলো ফুল আর কখনোই দেখিনি। বাবার কাছে জানতে পারলাম এটা কচুরিপানার ফুল। ফুলগুলো এত সুন্দর, এখানে এসে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। এখান থেকে যেতেই মন চাচ্ছে না। শুধু মনে হচ্ছে দেখি আর দেখি আর ছবি তুলি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা ফুলটিকে অনেকে ‘হেনা’ বলে ডাকেন। কিছু এলাকায় এটি ‘কস্তুরি’ ফুল নামেও পরিচিত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। এরা মূলত স্রোতহীন স্বাদু পানিতে জন্মায়। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে, যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদ্গম হতে পারে। পানি পেলে কচুরিপানার ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। তবে বেশি দিন স্থায়ী হয় না। নাজুক এ ফুল কাণ্ড থেকে আলাদা করলে খুব দ্রুতই নুয়ে পড়ে। তাই এ ফুল জলাশয়ে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই মুগ্ধতা ছড়ায়। এরা মূলত স্রোতহীন স্বাদু পানিতে জন্মায়। মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদের মধ্যে এই কচুরিপানা অন্যতম। সবুজ পাতাবিশিষ্ট এই কচুরিপানা পানির ওপরে এক মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available