লক্ষ্মীপুর (উত্তর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলাধীন উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু'গ্রুপের সংঘর্ষে সাইজ উদ্দিন (৪০) নামে এক স্পেন প্রবাসী নিহত হয়েছেন।
ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের হত্যা মামলা থেকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে নিজেদের বসতঘরে আগুন লাগিয়ে মিথ্যা আরোপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী (সাবেক মেম্বার) হানিফ দেওয়ান।
১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ দেওয়ান বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে এসব কথা বলেন তিনি।
নিহতের স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, আমার স্বামী ছিলেন এই পরিবারের কর্নধার। তিনি সবসময় পুরো পরিবারের পাশে ছায়ার মতো থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের ১২ তারিখ (শনিবার) দুই ছেলে ও আমিসহ স্ব-পরিবারে স্পেন যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু, আমার স্বামীর মৃত্যুর কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমাদের বিদেশ যাত্রা। বর্তমানে আমি যেন দুই ছেলেকে নিয়ে স্পেন যেতে পারি এবং সকল কাগজপত্র সম্পন্ন করতে পারি এজন্য বাংলাদেশ কনস্যুলেট স্পেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে যারা আমি ও আমার সন্তানদের এমন ক্ষতি করেছে দেশের চলমান আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে বাবাকে হত্যার সময় সাথে থাকা দুই ছেলে ১৬ বছর বয়সী লিখন ও ১২ বছর বয়সী নাসিমের রোমহষর্ক বর্ণনায় স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে ছিল আশপাশের সবাই।
তারা জানায় বড় ছেলে লিখনকে বাবার পাশ থেকে একপাশে সরিয়ে নিয়ে মুখ চেপে ধরে রাখে আর ছোট ছেলে নাসিমকে লাথি মেরে একপাশে ফেলে দিয়ে প্রথমত তাদের বাবা সাইজ উদ্দিনকে গুলি করে ফারুক কবিরাজ। এরপর ফারুক কবিরাজের ভাই মেহেদী কবিরাজ আরেকটি গুলি করে। এরপর তারা চিৎকার করতে থাকলে তাদেরকে গাছের সাথে ধরে রেখে অন্যরা তাদের বাবাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
এরপর অধিক রক্তক্ষরণ হতে থাকলে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে ফারুক কবিরাজের বাহিনীর অপর সহযোগী বিএনপি নেতা মান্নান সরকারের ছেলে কবিরের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ পুনরায় পথরোধ করে ফেলে এবং বলে "ওকে এখানেই মরতে হবে হাসপাতালে নিতে দিমুনা" বলে প্রায় এক ঘন্টা আটকে রাখে।
এরপর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
তারা আরও জানায়, তাদের বাবা সাইজ উদ্দিন দেওয়ান দেশে আসার পর ফারুক কবিরাজরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দেয়ার কারণেই তাদের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ওই সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় বারবার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত ফারুক কবিরাজের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে রায়পুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
তবে, এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জড়িতদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available