নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রী সন্তানসহ ৩ জনকে একাই হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার ইয়াসিন। স্ত্রী ও জেঠাসকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আর ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব কথা জানান ইয়াছিন।
তার দেওয়া তথ্যমতে ১৪ এপ্রিল সোমবার সকালে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি, রক্তমাখা জামাকাপড় ও নিহত লামিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক(তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, সৎ মায়ের করা মামলায় ইয়াছিন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিল। গত ঈদের তিনদিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। তবে মাদকাসক্ত ও কোন কাজ না করায় ইয়াসিনের সঙ্গে স্ত্রী লামিয়ার ঝগড়া হতো। এসব কারণে লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না ইয়াসিনকে দেখতে পারতেন না। ঘটনার দিন লামিয়া ও ইয়াসিন ঝগড়া লাগে। এক পর্যায় স্বপ্না আক্তার বঁটি নিয়ে ইয়াসিনকে মারতে যায়।
এ সময় ইয়াসিন স্বপ্নার হাত থেকে বঁটি কেড়ে নিয়ে লামিয়ার ঘাড়ে কোপ দেয়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন স্বপ্না চিৎকার দিলে তাকেও বঁটি দিয়ে কোপ দেয় ইয়াসিন। স্ত্রী ও জেঠাসের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ছেলে আব্দুল্লার গলায় থাকা তাবিজের সুতা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লামিয়া ও স্বপ্নার লাশ টুকরো টুকরো করে কম্বল ও কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে নেয়। লাশ তিনটি বস্তাবন্দি করে ওইদিন রাতে ভাড়া বাড়ির সামনে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। পরে হত্যায় ব্যবহৃত বটি ও নিহতদের রক্তমাখা জামাকাপড় বাড়ির অদূড়ে একটি পুকুরে ফেলে দেয়। স্ত্রীর ব্যবহৃত অ্যানড্রোয়েড মোবাইল ফোনটি ৫০০ টাকায় এক জায়গায় বিক্রি করে দেয় ইয়াসিন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে নিহতদের ভাড়া বাড়ির অদূড়ে একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটিটি উদ্ধার করা হয়েছে। তার আগে ১৩ এপ্রিল বিকেলে একই পুকুর থেকে রক্তমাখা জামাকাপড় ও বিক্রি করা জায়গা থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার ইয়াসিনের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জেরে প্রথমে স্ত্রীকে পরে তার স্ত্রীর বড় বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তারপর হত্যা করেছে ছেলেকে। হত্যার পরে স্ত্রী ও জেঠাসের দেহ থেকে মাথা ও পা আলাদা করে। এ ঘটনা সে একাই ঘটিয়েছে বলে জানায়। তবে সে এখনও নেশাগ্রস্ত। পুরোপুরি তার নেশা কাটেনি। সে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছে। তার সব কথা যাচাই বাছাই করে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। সব বিষয় নিশ্চিত হলে বিস্তারিত বলা যাবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, ট্রিপল হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিমান্ডে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তকাজ শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, মামলার প্রধান আসামির রিমান্ড শেষ হয়নি। তিনি এখনও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়নি। মামলার তদন্ত কাজ চলমান। এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল থেকে ওই তিনজন নিখোঁজ ছিল। পরে ১১ এপ্রিল বাড়ির সামনে ময়লার স্তূপে মানুষের কাটা হাত ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। তখন পুলিশ এসে ময়লার স্তূপ সরিয়ে মাটি খুঁড়ে তিনটি খণ্ড বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করেন। এঘটনায় নিহতদের বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে লামিয়ার স্বামী ইয়াছিন, শ্বশুর দুলাল মিয়া ও ননাশ শিমুকে আসামি দিয়ে ওইদিন রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available