হানিফ মেহমুদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আপন ভাইয়ের সকল সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বাবা-মেয়েকে অপহরণ করে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামি ও তাদের লোকজন। তাই নিজের ও মেয়ের নিরাপত্তা এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পরই এক যুবককে হাত-পা বেঁধে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
২৫ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের রিফুজিপাড়া মোড়ে ওই যুবককে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যায়।
আহত যুবক গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বসনীটোলা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে ফয়সাল রহমান সোহেল (৪০)। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে ফয়সাল রহমান সোহেল।
আহত সোহেল জানান, আমাকে ও আমার ছয় বছরের মেয়েকে বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে অপহরণ করে নির্যাতন করে আপন ভাই ফয়েজ রহমান সুজন ও চাচা নেতাউর রহমান। এরই জেরে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং অপহরণের মামলা করেন সাবেক স্ত্রী। এই মামলায় গত ১০ এপ্রিল আদালত তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷ এরপর থেকেই আসামীরা ও তাদের লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার আদালতে তারা জামিন পায়। প্রাণনাশের হুমকির জেরে নিজের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করি।
তিনি আরও বলেন, বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের পর আজকে সকালে রিফুজিপাড়া মোড়ে মামলার আসামি ফয়েজ রহমান সুজন ও চাচা নেতাউর রহমানের ঘনিষ্ঠ আনোয়ার মাস্টারের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী আমার হাত-পা বেঁধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ও বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানিয়েছি। আসামীরা জামিনে বের হয়েছে, এখনও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বাতেন খাঁর মোড়ের একটি অফিসে এই সংবাদ সম্মেলন করেন অপহরণের শিকার ফয়সাল রহমান সোহেল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সম্পদের হিসাব চাইতে গেলে সকল সম্পত্তি দখল করে ভোগ করতে গত বছরের ১৯ আগস্ট আমাকে ও ছয় বছরের মেয়েকে অপহরণ করে নির্যাতন করেন আপন ভাই ফয়েজ রহমান সুজন ও চাচা নেতাউর রহমান। এ ঘটনায় আমার সাবেক স্ত্রী মামলা করলে গত ১০ এপ্রিল আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই তাদের লোকজন আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবার সকল সম্পত্তি আমাকে না দিয়ে সম্পূর্ণ ভোগদখল করে আছে ভাই ফয়েজ রহমান সুজন। আমাকে বঞ্চিত করার পর যে সব স্বজনরা আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলছে তাদেরকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানি চলাকালীন সময়ে সেখানে আমাকে প্রবেশ করতে দেয়নি তাদের গুন্ডাবাহিনী।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল বাবা-মেয়েকে অপহরণ করে নির্যাতনের দায়ে হওয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গোমস্তাপুর আমলি আদালতের বিচারক সারমিন খাতুন ভাই ফয়েজ রহমান সুজন ও চাচা নেতাউর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার প্রধান আসামি ফয়েজ রহমানের আপন ছোট ভাই মো. ফয়সাল রহমান সোহেল ও ভাতিজি মোসা. ফামিয়া খাতুনকে অপহরণ করে নির্যাতনের মামলায় তাদেরকে কারাগারে পাঠায় আদালত। মামলার বাদী অপহরণের শিকার ফয়সাল রহমান সোহেলের সাবেক স্ত্রী সায়লা সারমিন শোভা। গত ২৮ আগস্ট গোমস্তাপুর থানায় তাদের দুজনকে আসামি করে মেয়ে ও সাবেক স্বামী অপহরণ ও নির্যাতনের মামলা করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আনোয়ার মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইস উদ্দীন জানান, ঘটনার পরপরই আমাদেরকে ফোনে হামলার বিষয়টি জানায় আহত ফয়সাল রহমান সোহেল। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওসি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available