মো. বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: অপরিকল্পিতভাবে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের কারনে অস্তিত্ব বিলীনের পথে পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী মাঝগ্রাম খাল। দীর্ঘদিন খনন না করা এবং স্লুইসগেট না থাকার কারনে খালটির অধিকাংশ জায়গা এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে।
সরেজমিনে খালটি পরিদর্শণকালে দেখা যায়, খালের জায়গা দখল করে ৭-৮ টি পয়েন্টে নির্মান করা হয়েছে আধাপাকা ও পাকা বাড়ি। ফলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে খালটির প্রাকৃতিক প্রবাহ। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রসাশন ও জনপ্রতিনিধিদের নজরদারী না থাকার সুযোগে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন পটুয়াখালীর সচেতন নাগরিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন কৃষক এশিয়ান টিভি অনলাইনকে জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে বয়ে যাওয়া খালটিতে কোন স্লুইসগেট বা কালভার্ট না করেই অপরিকল্পিতভাবে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করে, পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ফলে প্রাকৃতিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে একসময়ের প্রবাহমান খালটি এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। সড়ক বিভাগের বাঁধ নির্মানের পর থেকেই খালের দক্ষিণ অংশে পনির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এ অংশে কৃষক চাইলও সেচের জন্য পানি পাচ্ছে না। অথচ এই খালে একসময় ছিল থইথই পানি আর মাছ।
কথা হয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএম আতিক উল্লাহের সাথে। তিনি বলেন, খালটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হলে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা দিলে বাঁধ কেটে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, খালটির অবস্থান পৌরসভার মধ্যে হওয়ায় এর দায়দায়িত্ব পৌরসভার উপর বর্তায়। তবে জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকায় কমিটির পরবর্তি সভায় তিনি এ বিষয়টি উপস্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন।
পটুয়াখালীর মাঝগ্রাম খাল দখল হয়ে যাওয়ার ব্যপারে কথা হয় পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ১ বছর আগে সড়ক বিভাগে বাঁধ উম্মুক্ত করে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে আমরা খালটি খনন করতে চাই। পাশাপাশি আমাদের পরিকল্পনা আছে বাঁধ কেটে পরিকল্পিতভাবে ব্রিজ, কালভার্ট অথবা স্লুইসগেট নির্মান করার। এটি সম্ভব হলে খুব দ্রুতই আমাদের পটুয়াখালী শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। ইচ্ছে আছে এ খালটি খনন করে নৌপথ চালু করার এবং খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মান করার। দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, কেউ দখল করে থাকলে দখলমুক্ত করার জন্য যা কিছু দরকার আমরা তা করবো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৩-৮৪ সালে মির্জাগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকায় খালের উপরে একটি বাঁধ দেয়া হয়। এরপর থেকেই খালটির প্রাকৃতিক পানির প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সেই থেকে খালটি কখনো খনন করা হয়নি। অন্যদিকে ময়লা আবর্জনা ও নোংরা বর্জ্য ফেলার কারনে মশার উৎপাতে আশপাশের লোকজন এখন অতিষ্ঠ।
শুধু মাঝগ্রাম খাল নয়, জেলার সকল খাল উদ্ধার ও দখল মুক্ত করে আগের মতো প্রাণ ফিরে পাক এমনটাই প্রত্যাশা করেছে পটুয়াখালীর সচেতন নাগরিকরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available