মো. নেসার উদ্দিন, কুমিল্লা প্রতিনিধ: দেবীদ্বারে শিকলবন্দি অবস্থায় বাঁশবাগানে ছাপড়া ঘড়ে ইউনুছ মিয়া (৫৩) নামে এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২ জুন শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৬ নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের লুতু ভুঁইয়া কমপ্লেক্সের পাশে আলম মিয়ার বাড়ির নির্জন বাঁশ বাগানে এ অমানবিক দৃশ্যের দেখা মেলে।
সরজমিনে দেখা যায়, ৫ ফুট প্রশস্থ একটি খোলা ছাপড়া ঘড়ে মশারী নিচে বসে আছেন ইউনুছ মিয়া নামের ঐ ব্যক্তি। মশা-মাছি এবং দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে মশারী উঠিয়ে দেখা যায় পাশের একটি গাছের সাথে পায়ে শিকল বেঁধে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে ইউনুছকে। তার ডান হাতের আঙ্গুলে পঁচন ধরেছে এবং দুহাত ভাঙ্গা। পরনের কাপড়গুলো গত শীতে শরীরে জড়ানো, ময়লায় কাপড়ের রং পাল্টে গেছে।
নাম জিজ্ঞেস করাতেই বললেন, আমাকে কিছু টাকা দেন, কিছু কিনে খাবো। পরে সে জানায় তার নাম ইউনুছ মিয়া, বাবার নাম মৃত মুক্তল হোসেন। হাতের আঙ্গুলে পচন ধরলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলে, আমাকে পুড়িয়ে মারতে আমার মেজ ভাইয়ের স্ত্রী সেলিনা বেগম আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। সে আমার দুহাত ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার মেজ ভাই কবির আহমেদ ও তার ছেলেরা আমাকে গত ২৭ মে শুক্রবার এ নির্জন জায়গার বাঁশঝারে খুপড়ি বানিয়ে রেখে যায়। আমি যাতে পালিয়ে যেতে না পারি সেজন্য পায়ে শিকল লাগিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। আমাকে খাবার দেয়না, চিকিৎসা করায়না। তাদের ভয়ে আমাকে কেউ সাহায্য করতেও আসেনা, আমাকে বাঁচান।
প্রভাবশালী এ পরিবারটির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছিলেন না।
স্থানীয় একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, গত ৮ দিন ধরে এ অবস্থায় তাকে রাখা হয়েছে। ইউনুছ মিয়া প্রায় ২০ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু তার সংসার করা হয়নি। পরে আর বিয়ে করেনি। থাকতেন মেজ ভাই কবির আহমেদের সাথে। ওনার সহায়-সম্পত্তি সবকিছু কবির আহমেদ তার নিজের নামে লিখে নিয়েছে। কতটা নিষ্ঠুর হলে আপন ভাইয়ের সাথে কেউ এমন আচরন করতে পারে? খাদ্য, চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় ইউনুছ মিয়াকে একরকম মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে তার ভাই।
কথা হয় ইউনুছ মিয়ার মেজ ভাই অভিযুক্ত কবির আহাম্মদের সাথে। তিনি জানান, তার ভাই দীর্ঘ দিনধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছে। ঘরে পায়খানা প্রশ্রাব করে, ঘর থেকে বের হতে পারলে পাশের মার্কেট গিয়ে গাঁজা কিনে এনে গাঁজা সেবন করে। তাকে আলাদা একটি ঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু ঐ ঘরে প্রায়ই সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ পর্যন্ত ১২ বার আগুন লাগিয়েছে। গত শুক্রবারও ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে আপাতত বাঁশবাগানের এই ঘরে রাখা হয়েছে। পোড়া ঘর মেরামত করে আবারও ঐ ঘরে নিয়ে আসা হবে।
চিকিৎসার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, চেষ্টা করেছি হাসপাতালে নেয়ার, কিন্তু উনি রাজি হয়নি। তাই পাশের এক মহিলা কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করাচ্ছি।
অপর অভিযুক্ত কবির আহমেদের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, আমার দেবর নিজেই নিজের ঘরে আগুন দিয়েছে, হাত পুড়েছে এবং পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গেছে। এখন আমাকে দোষ দিচ্ছে। এটা মোটেই সত্য না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়েছি। এমন অমানবিক দৃশ্য দেখে বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে ইউনুছ মিয়ার চিকিৎসা, পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে বলেছি। তাকে পুকুর পাড়ের জঙ্গল থেকে যেন দ্রুত বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়, সে জন্য অনুরোধ করেছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available